উপার্জন বন্ধ, নীরবে শিবজ্ঞানে জীবসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়াদেবী

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব প্রতিনিধি : একদিকে একমুঠো অন্ন সংস্থান আর অন্যদিকে বাড়িতে থাকা অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালাতে সংসারের সমস্ত দায়দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে হাওড়ার আন্দুলের দ্যুইলার বাসিন্দা প্রিয়া শর্মাকে। নিঃসন্তান প্রৌঢ়ার বেঁচে থাকার সম্বল বলতে অসুস্থ স্বামী আর পাড়ার কুকুর-বিড়ালরা। সকাল হলেই পাড়ার কুকুর – বিড়ালরা ভিড় জমায় প্রিয়া দেবীর বাড়ির দরজায়।

প্রিয়াদেবী তাদের সযত্নে খাইয়ে দেন। বাড়ির টালির চালে কিমবা উঠোনে পাখিরা এসে বসে। তাদের জন্যেও ছোলা কিমবা গমের ব্যবস্থা রাখেন লাজুক প্রকৃতির এই মহিলা। তারপর শুরু হয় একমুঠো অন্নের তাগিদে লড়াই। ইমিটিশানের বিভিন্ন দ্রব্য নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বেড়িয়ে পড়েন প্রিয়াদেবী। ইমিটিশানের বিভিন্ন গহনা বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন পাড়ার কুকুর – বিড়ালদেরও খাওয়াতে ভোলেননা তিনি।

তাদের জন্য ব্যাগে থাকে বিভিন্ন খাবার। এভাবেই একদিন – দু’দিন নয় বছরের পর বছর ধরে নীরবে – নিভৃতে শিবজ্ঞানে জীবসেবার কাজ চলেছেন দ্যুইলার এই মহিলা। কিন্তু, করোনা যেন তাঁর সংসারে এনেছে এক অদ্ভুত অন্ধকার। লকডাউনের জেরে বাইরে বেড়োনা বন্ধ। তাই উপার্জনও বন্ধ। যার ফলে একবেলা অন্ন সংস্থান করতে গিয়েই নাজেহাল হচ্ছেন প্রিয়া শর্মা। তার পাশাপাশি তাঁর মনটাও খারাপ।

বিষন্ন কন্ঠে প্রিয়া শর্মা জানান, “একদিকে আয় বন্ধ, অন্যদিকে বিভিন্ন পাড়ায় বেড়োতে না পারায় পাড়ার কুকুর – বিড়ালগুলোকে নিয়ে খুব চিন্তিত। এই দুঃসময়ে তাদের যে কীভাবে খাবার জুটছে কে জানে!” করোনা সংসারে থাবা বসালেও তাঁর বাড়িতে একমুঠো খাবারের আশায় এখনো নিয়মিত ভিড় জমাচ্ছে পাড়ায় ৪ – ৫ টি কুকুর – বেড়াল।

আগে এদের জন্য মাছ – ভাত বরাদ্দ থাকলেও এই সংকটের মুখে নিজে আধপেটা অবস্থায় থেকেও দুপুরে ভাত, তরকারি খাইয়ে দেন পাড়ার কুকুর – বিড়ালদের। সন্ধ্যায় বিস্কুটের ঝুলি হাতে নিয়ে সযত্নে তাদের বিস্কুট খাইয়েও দেন। প্রিয়া দেবীর কথায়, “আমার কোনো সন্তান নেই। এরাই আমার সন্তানসম। এরাই আমার বেঁচে থাকার সম্বল। কোলকাতায় স্বামীর একটি ছোট্ট বইয়ের দোকান ছিল।

কিন্তু, স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় আমিই কোনোরকমে সংসার চালাই। তাই আমার অত্যন্ত সীমিত সাধ্যের মধ্যেই এদের নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করি।” যদিও, এদের মধ্যে কেউ-ই প্রিয়াদেবীর পোষ্য নয়, তবু বড়ো আপন। যেন এক আত্মিক বন্ধন। কেউ কেউ তো ‘মা’এর বারান্দাতেই খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রিয়া দেবীর মতো মানুষরাই তো মানুষরূপী ভগবান – সংসার জুড়ে চরম অভাব – অনটনের মাঝেও এই দুঃসময়ে অবলা প্রাণীদের ভালোবেসে স্নেহভরে সেবা করে চলেছেন।