লোকসংস্কৃতির শিল্পসম্ভার সংগ্রহের নেশায় বাড়িতেই সংগ্রহশালা বানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : কর্মজীবনে ছিলেন গ্রন্থাগারিক। তখন থেকেই লোকসংস্কৃতির শিল্পসম্ভার সংগ্রহ করা তার নেশা। উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা তপন সেন তার বাড়ির দোতলার বারান্দা এবং তিনটি কামরা সাজিয়েছেন নানারকম লোকসংস্কৃতির সম্ভারে। ২০১০ সালে চীনে গিয়ে সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন চীনের প্রথম সম্রাট শি হোয়াং তির মূর্তি। ২০১৭ সালে ত্রিপুরার কমলপুরে রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়ে হুঁকো টানছেন এক দল উপজাতির মানুষ। হুঁকো সংগ্রহের নেশা জেগে ওঠে। এদিকে হুঁকো দিতে নারাজ জনজাতির মানুষজন।

অবশেষে এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানের হস্তক্ষেপে মেলে হুঁকো। গত সাতচল্লিশ বছরের তার সংগ্রহের ভান্ডারে রয়েছে বহু বিলুপ্তপ্রায় সামগ্রী। বিশেষ ভাবে স্থান পেয়েছে দেশ বিদেশের সত্তরটি বিভিন্ন ধরনের পুতুল। এছাড়াও হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার দেওয়ানতলা ও উলুবেড়িয়ার বানিবনের বিরল কালো কলসিও রয়েছে তার সংগ্রহে। পুতুল সংগ্রহ প্রসঙ্গে তপন সেন বলেন এককালে ধনী গরীব নির্বিশেষে সব বাড়িতেই পুতুল খেলার চল ছিল। তবে বর্তমানে প্রযুক্তির আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে পুতুল। তাই হারিয়ে যাওয়া পুতুল সংরক্ষণ করে রেখেছি, যাতে করে আগামী দিনে পুতুল নিয়ে গবেষণা করা যায়।

পাশাপাশি গ্রামোফোন রেকর্ড, পুরনো ক্যাসেট, সি ডি দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা বাঁশি। কি নেই এই সংগ্রহশালায়। এখানেই শেষ নয় সংগ্রহশালায় রয়েছে একটি চরকা ও কুমড়োকে শুকনো করে ছোটখাটো পয়সা ও গহনা রাখার বাক্স। দোতলার দুটো ঘর ও ড্রয়িং রুম জুড়ে রয়েছে হারিয়ে যাওয়া লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতি ও শিল্পসম্ভার। রয়েছে পুরানো হ্যাসাক, ডেলাইট সহ বিভিন্ন বিরল সামগ্রী। তপন বাবু বলেন দীর্ঘদিনের অভ্যাস অবসরের পর নেশায় পরিনত হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা লোকসংস্কৃতির শিল্পসম্ভার রক্ষা করার ব্রত নিয়েছি। এগুলো সংরক্ষণ না করে রাখলে, আগামী প্রজন্মের মানুষ এই সামগ্রী দেখতে বা জানতে পারবেনা।

তিনি বলেন চাকুরীজীবনের ও অবসরকালীন সমস্ত টাকা এই কাজে খরচ হয়ে গেছে। তিনি বলেন সংগ্রহশালা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে করে আগামীদিনে আরও বড়ো সংগ্রহশালার প্রয়োজন। কিভাবে হবে জানিনা। সংগ্রহশালাটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিয়েছেন তপন বাবু। প্রতিদিন সেখানে ভীড় জমান বহু মানুষ। সংগ্রহশালা দেখতে আসা এক শিক্ষিকা সুস্মিতা সিনহা বলেন অনেকের মুখে শুনেছিলাম। তাই আজ দেখতে এলাম। সংগ্রহশালা দেখে সমৃদ্ধ হলাম। তিনি বলেন শিক্ষক শিক্ষিকাদের উচিত ছাত্র ছাত্রীদের এই সংগ্রহশালায় নিয়ে আসা। যাতে করে ওরা এই প্রাচীন শিল্প সামগ্রী দেখতে পারে, তার সম্পর্কে জানতে পারে। তিনি তপন বাবুকে কুর্নিশ জানিয়ে বলেন, আমরা চাই ওনার এই প্রয়াস চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক এবং ভবিষ্যতে এই সংগ্রহশালার আরও বড়ো হোক।