আনন্দদায়ক শিক্ষা দানের মাধ্যমে নতুন দিশা দেখাচ্ছে আমতার মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Updated on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : হাওড়া জেলার আমতা ১ নং ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত মোল্লারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই স্কুলের একতলার একটি কক্ষ থেকে কচিকাঁচা ছেলেমেয়েদের সমস্বরে ভেষে আসছে রবি ঠাকুরের গান। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে একতালার একটি কক্ষে দেখা গেল তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা বেঞ্চে বসে গান গাইছে। সামনের টেবিলে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শেখাচ্ছেন গানের দিদিমণি। গান গাওয়ার সাথে সাথেই দিদিমণি লক্ষ্য রাখছেন ছাত্রীরা ঠিক মতো গান গাইতে পারছে কিনা ? প্রতি মঙ্গলবার এই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের গান শেখাতে আসেন এই গানের দিদিমণি। দ্বিতল বিশিষ্ট স্কুল বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলা উঠে দেখা গেল একটি কামরায় কঙ্কালের মডেল নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মানুষের শরিরের হাড়ের অঙ্গ প্রতঙ্গ সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন এক শিক্ষক। উৎসাহী এক ছাত্র প্রশ্ন করলো ” মাষ্টারমশাই হাতে এতগুলি ছোটবড় হাড় থাকে ? শিক্ষকের উওর পেয়ে তৃপ্ত চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ।ভাস্কর দোলুই, মিতা হাজরা, তৃপ্তি মাখাল,আদিত্য সাউ, সূর্য্য দোলুই, শ্রীমন্ত ময়রা,রণি মালিক, শাশ্বতী বাগ,শিউলি মেউর,পার্বতী দোলুই প্রমুখদের বয়স সাত থেকে আট। তারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া। স্কুলের কম্পিউটার রুমে বসেই তারা মাউস কে টিপে কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটিয়ে তুলছে ঘর, জীবজন্তুর ছবি। ভূল হয়ে গেলে কম্পিউটার শিক্ষক প্রত্যুষ কোলে তা সংশোধন করে দেখিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়।

ফলত উৎসাহিত স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। বাচ্চা ছেলেমেয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করলে তাদের কেউ বকুনি দেয় না। পরিবর্তে তারা শিখে যাচ্ছে অনেক কিছুই। তাই কাজ শেষ হয়ে গেলে বড়দের মতো কাপড় ঢাকা দিয়ে যাচ্ছে কম্পিউটারটিতে। তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী তৃপ্তি মাখাল বলে পাশের গ্রামে তার এক আত্মীয় সেও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তাদের স্কুলে কম্পিউটারটি শেখানো হয়,গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার দোতলা স্কুল থেকে কচিকাঁচা ছেলেমেয়েদের সমস্বরে ভেষে আসছে ” ও আমার দেশের মাটি, তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা…..”। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে একতালার একটি কক্ষে দেখা গেল তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা বেঞ্চে বসে গান গাইছে। সামনের টেবিলে হারমোনিয়ামে গান শেখাচ্ছেন এক দিদিমণি। তার সাথে তাল মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ও গান গাইছে। গানের দু’এক কলি গাওয়ার পর দিদিমণি থেমে গেলেন। লক্ষ্য রাখছেন ছাত্রছাত্রীরা গান গাইতে পারছে কিনা ? দিদিমণি গান গাওয়া থামিয়ে দিলেও তিনি দেখলেন ছাত্রছাত্রীরা ঠিক গাইছে। প্রতি মঙ্গলবার দিদিমণি ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গান শেখাতে আসেন ওই দিদিমণি।
দ্বিতল বিশিষ্ট স্কুল বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলা উঠে দেখা গেল একটি কামরায় একজন শিক্ষক কংকালের মডেল নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বোঝাচ্ছেন মানুষের শরিরের হাড় ও অংগপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে। উৎসাহী এক ছাত্র প্রশ্ন করলো ” মাষ্টারমশাই হাতে এতগুলি ছোটবড় হাড় থাকে ? শিক্ষকের উওর পেয়ে খুশি চতুর্থ শ্রেণীর ঐ ছাত্র।
এরই পাশাপাশি রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরি। সেখানে রয়েছে মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র, আছে তুলাদণ্ড, রয়েছে প্র‍্যাক্টিক্যাল কাজের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট কাঁচের জগ সহ অনেক কিছুই। ল্যাবরেটরি রুৃমের পাশেই আছে লাইব্রেরি। যে লাইব্রেরিতে আছে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বই। লাইব্রেরি ঘরের পাশের ঘরটিতে আছে কম্প্যুটার কক্ষ। যেখানে রয়েছে আটটি কম্পিউটার । কম্পিউটার কামরার পাশেই রয়েছে প্রাক প্রাথমিক ছাত্র ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষ। সেই কামরার গোটা দেওয়াল জুড়ে রয়েছে নীতিকথা সম্বলিত একাধিক ছবি। ছোট বয়স থেকে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক বলাই যায়। এ’ছাড়া আঁকার শিক্ষক ও আসেন সপ্তাহে একদিন করে। গানের শিক্ষয়িত্রী ও আঁকার শিক্ষক সামান্য টাকা পান স্কুল থেকে। তবে সরকারি ভাবে তাদের টাকা দেওয়ার কোন রকম সুযোগ নেই। তাই বিদ্যালয়ের যে তিনজন স্থায়ী শিক্ষক আছেন,তারাই ওই টাকা দিয়ে থাকেন। এমন কি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সুপ্রিয় প্রামাণিক বিজ্ঞানের বিষয়ে দক্ষ। তিনি স্কুলের ক্লাস শেষ করে ছাত্রছাত্রীদের হাতে কলমে পদার্থবিজ্ঞানের প্র‍্যাক্টিক্যাল করান।

এই ধরনের ব্যতিক্রমী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্ধান মিলবে আমতা এক নম্বর ব্লকের খড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোল্লারচক গ্রামে। মোল্লারচক গ্রামাটি তপশীল সম্প্রদায় অধ্যুষিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ হাজরা বলেন, আমাদের স্কুলে তিনজন স্থায়ী শিক্ষক ও একজন অস্থায়ী শিক্ষিকা আছেন। শিক্ষক ও শিক্ষিকারা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি যে, উন্নতমানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সরকারি স্কুল ছেড়ে ছাত্রছাত্রীদের বেসরকারি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করবো। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় মুখী করার জন্য তাদের উপযোগী ও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে। গ্রামের মানুষজনদের সাথে আলোচনা করে ধাপে ধাপে কম্পিউটার,ল্যাবরেটরি,লাইব্রেরি চালু করি। শিক্ষকদের নিজেদের টাকা দিয়ে গানের ও আকাঁর শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করছি। তবে ওই শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের যা সাম্মানিক দেওয়া হয়, তা অতি নগন্য। এর মধ্যে স্কুলে “নব কিশলয় ” নামে একটি দেওয়াল পত্রিকা চালু করা হয়েছে। তবে এলাকার গ্রামবাসীরা সহযোগিতা না থাকলে এই সব প্রকল্প করা সম্ভব হত না বলে জানান প্রধান শিক্ষক দেবাশীষ হাজরা ।

Leave a Comment