পড়ুয়াদের টিসি দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল বাগনানের এক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার উত্তেজনা ছড়াল বাগনানের হাল্লানের এক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।‌ অভিযোগ ওই শিক্ষা‌ প্রতিষ্ঠানের তরফে দুই পড়ুয়াকে টিসি দেওয়ার প্রতিবাদ করলে সব পড়ুয়াদের হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হুমকির প্রতিবাদে তারা অনশন শুরু করে। তখন পরিচালন কমিটি স্থানীয় কিছু লোক ডেকে অনশনরত দশম শ্রেণীর ওই পড়ুয়াদের মারধর করে বলেও অভিযোগ। বিষয়টি বাগনান ২ নম্বর ব্লকের বিডিওকে জানানোর পাশাপাশি বাগনান থানায় অবস্থান বিক্ষোভ দেখায় আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা।এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। তাদের দাবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির লোকেরা তাদের ব্যাপক মারধর করেছে। কিল ঘুষি চড় থাপ্পড় কিছুই বাদ যায়নি। এমনকি চেলাকাঠ এনে পড়ুয়াদের মারধর করে তারা। কারও মাথায় গালে কষিয়ে চড় মারেন পরিচালন কমিটির মদতপুষ্ট লোকেরা। পড়ুয়াদের জামাকাপড় ছিঁড়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া অভিযোগ পড়ুয়াদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পড়ুয়াদের এতটাই মারধর করা হয়েছে যে তাদের বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও হোস্টেলের সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। পরিচালন কমিটির লোকেদের মারধর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাগনান ২ নম্বর ব্লকের বিডিও সুমন চক্রবর্তী বলেন, পড়ুয়াদের মারধর করার একটা মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। পড়ুয়ারা ও তাদের অভিভাবকরা এমনই অভিযোগ জানিয়েছে। লিখিত কোনো অভিযোগ পায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পড়ুয়াদের কাছ থেকে জানা গেল ওই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের আবাসিক থেকে পড়াশোনা করে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বাড়ি। তবে প্রত্যেকে পড়ুয়াই হাল্লান হাইস্কুলের মাধ্যমে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ১০৮ জন পড়ুয়া রয়েছে দশম শ্রেণীতে। গোলমাল হয়েছে তাদের সঙ্গেেই।ঘটনার সূত্রপাত কয়েক মাস আগে। হোস্টেলে ভাঙচুর করার অভিযোগে কয়েকজন পড়ুয়াকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তাদের হোস্টেল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়। পরে আবাার তাদের ফিরিয়ে নেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। গত মঙ্গলবার আবার গোলমাল হয়।

এর জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দুই পড়ুয়াকে আবার হোস্টেল থেকে বের করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয় বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে চলে যেতে।এতেই সমস্যা শুরু হয়। পড়ুয়ারা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করে। ওই দিনই তারা বাগনান ২ নম্বর ব্লকের বিডিও সুমন চক্রবর্তীকে বিষয়টি জানায়। পাশাপাশি বাগনান থানায় ও আসে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পড়ুয়াদের হোস্টেলে ঢুকতে দেয়। পড়ুয়াদের অভিযোগ ওই রাতেই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অনেক পড়ুয়াকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোস্টেল ছেড়ে চলে যেতে বলে। এর প্রতিবাদে পড়ুয়ারা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হোস্টেল চত্ত্বরে অনশন শুরু করে। অভিযোগ তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির মদতপুষ্ট কিছু লোক পড়ুয়াদের উপরে চড়াও হন। তাদের মারধর করে। এদিন বাগনান থানায় গিয়ে দেখা গেল ৫০-৬০ জন পড়ুয়া থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেছে। এক পড়ুয়ার পায়ে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। সে জানায় চেলা কাঠ দিয়ে মারা হয়েছে।

কিছু পড়ুয়া জানায় তাদের মুখে চড় থাপ্পড় ঘুষি মেরেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন কমিটির মদতপুষ্ট লোকেরা। দেখা গেল কয়েকটি পড়ুয়ার জামা গেঞ্জি ছেঁড়া। তারা জানায় মারধর করে তাদের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও। তাদের বক্তব্য যদি তাদের ছেলেরা অন্যায় করে তাহলে অভিভাবকদের জানানো হল না কেন। তাছাড়া ছোট ছোট ছেলেদের এভাবে কেন মারধর করা হয়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করে। পড়ুয়াদের গালিগালাজ করে। তারা এর প্রতিকার চাই। প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে সেখ আব্দুল মুজিদ বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আমরা কোনো পড়ুয়ার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করি না। বরং পড়ুয়াদের অনেক ছাত্র সুলভ আচরণ করে না। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নষ্ট করেছে। অন্য এক পড়ুয়াকে মেরেছে। এমনকি পরিচালন কমিটির এক সদস্যকেও মারধর করেছে।