একটি নিম কাঠেই তৈরি হয়েছিল প্রতিমা, বাগনানের খালোড়ের কালী মা’য়ের কাছে ছুটে আসেন অজস্র ভক্ত

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : সামনেই দীপান্বিতা অমাবস্যা। প্রথা মেনে তিন বছর পর রঙের প্রলেপ পড়ছে মাতৃ মূর্তিতে। সেজে উঠছে গ্রামীণ হাওড়ার বাগনানের সুপ্রাচীন খালোড় কালীবাড়ি। প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন খালোড় কালীবাড়ির সাথে জড়িয়ে বহু ঐতিহ্য, ইতিহাস। এমনকি খালোড়ের কালী মা’য়ের সাথে মোঘল সম্রাটের আকবরের নামও প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে, এমনটাই মনে করেন বহু মানুষ।খালোড় কালীবাড়িতে নিত্যদিন বহু দূরদূরান্ত থেকে ভক্ত সমাগম ঘটে। নিত্যপুজো অনুষ্ঠিত হয়। সকাল হলেই মন্দিরের দ্বার ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। শুরু হয় পুজো। দুপুরে পঞ্চব্যঞ্জন ভাজা সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয়। বিকেলে ফের ভক্তদের জন্য মা’য়ের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় পুজো অনুষ্ঠিত হয়। নিত্যপুজোর পাশাপাশি প্রতিবছর দীপান্বিতা অমাবস্যাত মা’য়ের পুজোও অনুষ্ঠিত হয়। কালীপুজোয় ভক্তের ঢল নামে বাগনান-শ্যামপুর রোডের উপর অবস্থিত খালোড় কালীবাড়িতে। প্রাচীন প্রথা মেনে প্রতি তিন বছর অন্তর মাতৃ মূর্তি রঙ করা হয়। এবার মাতৃমূর্তি রঙের কাজ চলছে। সেজে উঠছে কালীবাড়ি চত্বর। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…

জানা যায়, রাজা কন্দর্প নারায়ণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে খালোড়ে কালী মা’কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় আট ফুটের দক্ষিণাকালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করে মাতৃ আরাধনা শুরু হয়। ১২৯৫ সালে সেই প্রতিমা বিনষ্ট হলে একটি দারুমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কথিত আছে, দ্বিতীয় মূর্তিটিও নষ্ট হয়ে গেলে শ্যামপুরের বিশিষ্ট শিল্পী গণেশ চন্দ্র মন্ডল দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি মাত্র নিমকাঠের সাহায্যে বর্তমান মূর্তিটি তৈরি করেন। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ৩২ শে আষাঢ় বর্তমান মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন বহু মানুষ মা’য়ের কাছে মনস্কামনা পূর্ণ করার বাসনা নিয়ে কালীবাড়িতে আসেন। প্রতিবছর ভাদ্র ও পৌষ মাসে বিশেষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি, দীপান্বিতা কালীপুজোতেও মা’য়ের পুজো অনুষ্ঠিত হবে। ভক্তের ঢল নামবে খালোড়ের ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে। শুধু বাগনান কিংবা গ্রামীণ হাওড়া নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ মা’য়ের কাছে আসেন। মোঘল সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষক আবুল ফজল ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থ অনুযায়ী প্রাচীন এই ‘খালোড়’ গ্রাম ছিল ‘খালোড়’ পরগণার অধীনস্থ। বলা বাহুল্য, খালোড়ের মা কালী সমগ্র বাগনানবাসীর অভিভাবিকা। যেকোনো শুভ কাজে মা’য়ের কাছে পুজো নিবেদন করে শুভ কাজ শুরু করেন বাগনানের মানুষজন। ইতিহাসপ্রসিদ্ধ বহু প্রাচীন খালোড় কালীবাড়ি জুড়ে এখন সাজো সাজো রব।