নিজস্ব সংবাদদাতা : হাসপাতালের বেডে শুয়ে বছর দেড়েকের অগ্নিদগ্ধ ফুটফুটে কন্যাসন্তানকে সাথে নিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অগ্নিদগ্ধ মা। দীর্ঘ চারদিনের সেই হার মানা লড়াইয়ে শুক্রবার ভোরেই হার মানলেন গ্রামীণ হাওড়ার শ্যামপুর থানার আইমা গ্রামের গৃহবধূ ইয়াসমিনা বেগম। যদিও মাতৃহারা কন্যাসন্তান এখনো উলুবেড়িয়া সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
কিন্তু মৃত্যুর আগে ইয়াসমিনার দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে তার উপর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের চরম অত্যাচারের কাহিনী। এমনকি তাকে পুড়িয়ে দেওয়ার কথাও জানা গেছে। বছর একুশের ইয়াসমিনার মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে আইমা গ্রামের মানুষজন। মৃতার এক আত্মীয় জানান, দাবিপূরণ করতে না পারাই কেড়ে নিল ইয়াসমিনার প্রাণ। তিনি জানান, গ্রামের মানুষের থেকেই গত ২৮ শে ডিসেম্বর সকাল ১১ টা নাগাদ বোন ও ভাগ্নীর পুড়ে যাবার খবর পাই।
তাঁর অভিযোগ, বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সে সময় মায়ের চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে বছর দেড়েকের শিশু শর্মিলা। আর সেই সুযোগেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সকালে ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোনায় সন্দেহ হয় স্থানীয় মানুষের। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসে প্রতিবেশীর। তাঁরাই অগ্নিদগ্ধ মা ও কন্যাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যেই ইয়াসমিনার বাপেরবাড়ির তরফে শ্যামপুর থানায় গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, জা,ভাসুরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর দু’ই আগে গ্রামীণ হাওড়ার শ্যামপুরের আইমা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ইটভাটা শ্রমিক সরিফুল মল্লিকের সাথে বারগড়চুমুক গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসমিনার দেখাশোনা করে বিয়ে হয়।
জানা গেছে, প্রায়শই বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার দাবি করে ইয়াসমিনার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত সরিফুল ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অভিযোগ, এমনকি টাকা না পেলে ইয়াসমিনাকে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দিত তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। এই ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ ও ইয়াসমিনার পরিবারের লোকজন।