নিজস্ব সংবাদদাতা : নামে ‘সুন্দরবন’ হলেও হাসিম, দ্বিজেন, মানোয়ারাদের মতো সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপের মানুষের জীবনটা ভয়ঙ্কর। লড়াই, লড়াই আর লড়াই। এটাই তাঁদের বাঁচার একমাত্র মন্ত্র।
এই ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের মাঝেই তাঁরা খুঁজে পান জীবনের অপার আনন্দ, বাঁচার রসদ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণশক্তি।
সেরকমই এক অদম্য লড়াইয়ে সামিল সুন্দরবনের প্রান্তিক দ্বীপ ঘোড়ামারার বাসিন্দারা। একদিকে সাগরের গ্রাস থেকে নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষা আর অন্যদিকে আয়লা, বুলবুল, আম্ফানের মতো দানবীয় শক্তির মোকাবিলা।
আম্ফান কেড়ে নিয়েছে ওদের মুখের ভাত, কেড়েছে ভিটে-মাটি। নবীন, সুস্মিতা, আমিনাদের মতো পড়ুয়াদের চোখে ছিল বড়ো হওয়ার স্বপ্ন।
সেই স্বপ্নেও কোথাও যেন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আম্ফান। ঘোড়ামারা আজ সব হারিয়ে সহায়হীন, বিপন্ন। আম্ফানের পর তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও দ্বীপাঞ্চলে সামান্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছালেও তা যথেষ্ট নয়।
এরকমই এক সংকটময় পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের বিপন্নপ্রায় দ্বীপ ঘোড়ামারার মানুষের পাশে দাঁড়াল গ্রামীণ হাওড়ার আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’।
জানা গেছে, আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির তরফে ৮-১০ জনের একটি দল আম্ফান বিধ্বস্ত বিপন্নপ্রায় দ্বীপের খাসিমাড়া গ্রামে গিয়ে ‘বাদাবনে উত্তরণ’ শীর্ষক কর্মসূচিতে দ্বীপের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪২০ জন পড়ুয়ার হাতে তুলে দেয় খাতা, পেন, পেন্সিল, টর্চ লাইট, ফাইল সহ অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী।
পাশাপাশি, আম্ফানের তান্ডবে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘোড়ামারা দ্বীপের ৪১৫ টি পরিবারের হাতে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, নুন, সোয়াবিন, সুজি, মোমবাতি, দেশলাই, মাস্ক, স্যানিটাইজার, স্যানিটারি ন্যাপকিন সহ বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
সংস্থার সম্পাদক তাপস পাল জানান, “মাত্র ৭-৮ দিনের মধ্যে এই উদ্যোগ। সংস্থার বহু শুভাকাঙ্ক্ষীদের পাশাপাশি ডাক বিভাগের কর্মচারী সংগঠন – এনএফপিই এর সদস্যরাও এগিয়ে এসেছেন এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে।”
এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জীব সাগর, স্থানীয় মাডপয়েন্ট ডাকঘরের আধিকারিক নিখিল ভুঁইয়া সহ অন্যান্যরা।
আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক হাজার গাছের বীজ ছড়ানো হয় বলেও জানা গেছে।