নিজস্ব সংবাদদাতা : রোগির প্রয়োজনে রক্তশূন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করতে আসা যুবককে রক্ত গ্রহণ না করেই ফিরিয়ে দিল উলুবেড়িয়া হাসপাতালের মেডিক্যাল ব্যাঙ্ক। বুধবার রক্তদাতাদের সংগঠন ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের কাছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক রোগির পরিবার জানায় রক্তের প্রয়োজনের কথা। ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের আবেদন জেনে রক্তদান করতে কাঠফাটা রোদ্দুরে বাগনান থেকে চলে আসে এ পজিটিভ রক্তদাতা সায়ন হোসেইন। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…
সায়নের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে ঘন্টাখানেক পর ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী বলেন, রক্তের প্রয়োজন নেই। ক্যাম্প থেকে শুক্রবার রক্ত মিলবে। আমি তো রীতিমত অবাক হয়ে যাই। রক্ত নেই ব্লাড ব্যাঙ্কে। রোগির পরিবার দুশ্চিন্তায়। ব্লাড ব্যাঙ্ক বললো রক্ত একদিন পরে ক্যাম্প থেকে আসবে। রোগির পরিবারের পক্ষে পায়েল সামুই বলেন, প্রতিবারেই হাসপাতাল রক্তদাতা আনতে বলে। আমার বোনের হিমোগ্লোবিনও কম ছিল। তবুও রক্তদান করতে আসা মহান ব্যক্তির রক্ত নিল না। টানা সোমবার থেকে রক্ত মেলেনি। বৃহস্পতিবার সকালে উলুবেড়িয়া হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া বিভাগে রোগীদের হিমোগ্লোবিন কম থাকলেও রক্ত নেই জানিয়ে ভর্তি বন্ধ থাকে।
জানতে পেরে ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের পক্ষে শাশ্বত পাড়ুই, শতাব্দী বেরা, আক্তারুল খানেরা উলুবেড়িয়া হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া ইউনিটে যান। ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের উদ্যোগে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগির পরিবার সংগঠিত হয়। হাসপাতাল সুপার থেকে উলুবেড়িয়ার মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপল কারোর দেখা পাওয়া যায় নি বৃহস্পতিবার। ক্ষুব্ধ রোগির পরিবারের চাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে ফেরত দেওয়া থ্যালাসেমিয়া রোগিদের ভর্তি নিতে বাধ্য হন।
ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের সম্পাদক শাশ্বত পাড়ুই বলেন, গ্রীষ্মকালের রক্তের সংকট তীব্র হচ্ছে ব্লাড সেন্টার গুলিতে। স্বাস্থ্য প্রশাসন রক্তদান আন্দোলনের সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ইতিমধ্যেই সংকট মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। আমরা রক্তদান আন্দোলনের কর্মী হিসেবে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের বলেছি, কোন রক্তদাতা রোগির জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারগুলিতে রক্ত দিতে গেলে তাদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রক্তদানের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছিলেন, সরকারি সব ব্লাড সেন্টারে রক্তদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বাস্তবে ঠিক উল্টোটাই ঘটছে। রক্তদান করতে গেলেও রক্ত নেওয়া হচ্ছে না।
রক্তদাতা দূর প্রান্ত থেকে গিয়ে ফেরত আসছে সরকারি উদাসীনতায়। আমরা মনে করি, রক্তের সংকট যত তীব্র হবে। মুমূর্ষ রোগিরা রক্ত না পেয়ে সংকটে পড়বেন। রক্তদান আন্দোলনের সংগঠনকে রক্তদানের কাজ থেকে নিষ্ক্রিয় রাখতে পারলে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে গরীব প্রান্তিক মানুষ আর্থিক সংকটে পড়বেন। কোনো রোগির জন্য রক্তদান করতে আসা যুবককে রক্তশূন্য থাকা ব্লাড ব্যাঙ্ক ফেরত পাঠালেন?
রক্তদাতাদের সংগঠনটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার ঠায় রাত পর্যন্ত থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের পরিবারের সঙ্গে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ছিল। রাতে অবশ্য রক্তের জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রত্যেক থ্যালাসেমিয়া শিশু রক্ত পেয়েছে। তবে কেন রক্তশূন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান করতে আসা যুবকের রক্ত গ্রহণ করা হয় নি তার উত্তরে ব্লাড ব্যাঙ্কের পক্ষে বলা হয় রক্তদান করলেও পরেরদিন রক্ত পেত রোগির পরিবার। তাহলে জরুরি সংকটে কিভাবে রোগি রক্ত পাবে রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে! এই প্রশ্ন রেখেছে রক্তদাতাদের সংগঠন ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ। এমনকি ব্লাড সেন্টারে ব্লাড গ্রুপ ভিত্তিক মজুত রক্তের স্বচ্ছতা জানাতে আন্দোলন করে আদায় হওয়া ডিসপ্লে বোর্ড পর্যন্ত চালু করা হয় নি বলে অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য দপ্তর সিঙ্গল ডোনারের রক্তদানের পর টেস্টের জন্য স্পট কিট না দেওয়ায় রক্ত রোগির পরিবারকে সেদিন দেওয়া যায় না। ব্লাড ডোনার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের লড়াইতে বুধবার প্রতিটি থ্যালাসেমিয়া শিশু রক্ত পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছে। সংগঠনের সম্পাদক শাশ্বত পাড়ুই বলেছেন, স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের সমস্ত কর্মীরা অঙ্গীকার নিয়েছেন একটিও জীবন যেন রক্তের অভাবে না হারায়। থ্যালাসেমিয়া রোগিদের পরিবারের পক্ষে পায়েল সামুই এর অভিযোগ, নিয়মিত রক্ত দিলে তবেই আমার বোন কোয়েল সুস্থ থাকে। প্রতিবারে উলুবেড়িয়া হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক আমাদের হেনস্থা করে। সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে।
ইতিপূর্বে সময় মত রক্ত না পেয়ে কয়েকজন থ্যালাসেমিয়া শিশুর মৃত্যু হলেও উলুবেড়িয়া ব্লাড সেন্টার এখনও উদাসীন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতির বদল করতে গেলে সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন বলে রক্তদাতাদের সংগঠনগুলির দাবি।