নিজস্ব সংবাদদাতা : সোমবার রাতে বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠল গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের গুমগড় এলাকা। উদয়নারায়ণপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত ১ ও জখম ৬। জানা গেছে, গতকাল রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৭ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানেই সেখ সাদ্দাম নামক একজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, একটি খুনের ঘটনার সাক্ষীদের ভয় দেখাতেই প্রচুর পরিমাণে বোমা তৈরি হচ্ছিল। ২০১৩ সালে উদয়নারায়ণপুরের বিধিচন্দ্রপুর এলাকার একটি ক্লাবের ভিতরে ঢুকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল ঐ এলাকার তৎকালীন তৃণমূলের বুথ সভাপতি সেখ হালিমকে।
হালিমকে খুনের অভিযোগে এলাকার বাসিন্দা আলি আফসারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তারপর থেকে আলি আফসার দীর্ঘদিন জেল হেফাজতেই ছিল। তবে কিছুদিন আগেই সে জামিনে মুক্তি পায়। জানা গেছে, শীঘ্রই সেই মামলার ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে। অভিযোগ, বেশ কিছুদিন যাবৎ এই কারণেই হুমকি দিচ্ছিল আফসার। সোমবার রাতে এই মামলায় সাক্ষীদের উপর হামলা চালানোর জন্য ১৫-২০ জন দাগী দুষ্কৃতকারীকে নিয়ে গুমগড়ের ফাঁকা মাঠের মাঝে একটি পাম্প হাউসের সামনে জড়ো হয় আফসার। কিন্তু, আগাম খবর পেয়েই সেখানে পৌঁছে যায় উদয়নারায়ণপুর থানার পুলিশ।
অভিযোগ, সেখানেই পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়তে শুরু করে আফসার বাহিনী। তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৭ জন গুরুতর জখম হয়। পাশাপাশি বাকিরা অল্পবিস্তর জখম অবস্থায় অন্ধকারে ফাঁকা মাঠের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণের ব্যাপক তীব্রতায় কেঁপে ওঠে স্থানীয় এলাকা। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় মানুষ। ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় স্থানীয় গ্রামে। আজ সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা মাঠের মাঝে এই পাম্প হাউস। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে র্যাফ ও সিভিক ভলান্টিয়াররা। পাম্প হাউসের সামনের দেওয়ালের বিস্ফোরণের চিহ্ন স্পষ্ট। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে জামা কাপড়ের টুকরো, বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত মোবাইল, বোমা বাঁধার দড়ি সহ বোমের বিভিন্ন সামগ্রী। ঘটনাস্থলটি কর্ডন করে রাখা হয়েছে।
সকালে ঘটনাস্থলে যান হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশীষ মৌর্য ঘটনাস্থল ঘুরে আশীষ মৌর্য বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় পৌঁছালে দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়তে শুরু করে। সেই সময় দুষ্কৃতকারীরা পালাতে গেলে তাদের কাছে থাকা বোমা ফেটে যায়।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, “এই ঘটনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৬ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, “গ্রেফতার হওয়া দুষ্কৃতকারীরা আহত হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তা-ই তাদের এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছেনা।” ২০১৩ সালে খুন হওয়া সেখ হালিমের ভাই তথা স্থানীয় বিধিচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের সদস্য সেখ নাজিম বলেন, “২০১৩ সালে ক্লাবে সবার সামনে ঢুকে আমার দাদাকে গুলি করে হত্যা করেছিল আফসার। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরউ আমাকে সহ সমস্ত সাক্ষীদের ফোনে হুমকি দিচ্ছিল।” তিনি আরও বলেন, “আমার ও সাক্ষীদের পরিবার তীব্র আতঙ্কে রয়েছি। কারণ, এই ঘটনার মূল কারিগর আফসার পালিয়ে গেছে। যেকোনো সময়ে আমাদের উপর আক্রমণ হানতে পারে।”
উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “আফসার বড়ো দুষ্কৃতি। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। আমাদের দলের বুথ সভাপতি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল আফসার। সেই মামলার সাক্ষীদের উপর হামলার উদ্দেশ্যেই বহিরাগত দুষ্কৃতকারীদের সে জড়ো হয়েছিল।” পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় যুক্ত ছিল ১০-১২ জন দুষ্কৃতী। পলাতক দুষ্কৃতীদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। ঠিক কী কারণে দুষ্কৃতিরা গুমগড়ে জড়ো হয়েছিল, কেনই বা বিস্ফোরণ তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।