বামেদের নবান্ন অভিযানকে ঘিরে ধুন্ধুমার, পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ, প্রতিবাদে শুক্রবার বাংলা বন্ধের ডাক

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : মুখে ‘খেলা হবে’ স্লোগান, গলায় বাঁশি, পায়ে ফুটবল আর হাতে লালকার্ড নিয়ে সকাল থেকেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তিলোত্তমার বুকে ভিড় জমাতে শুরু করেন ছাত্র-যুবরা। বেলা যত বাড়তে থাকে এই সংখ্যাটাও তত বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার দশটি বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকা নবান্ন অভিযানে এভাবেই আত্মপ্রত্যয়ী ভঙ্গিমায় পথে নামতে দেখা যায় কয়েক হাজার তরুণ-তরুণীকে। সময় যত গড়াতে থাকে উত্তেজনার পারদও তত চড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালেই প্রথম গন্ডগোলের সূত্রপাত। আচমকাই এক্কেবারে নবান্নের সামনে চলে আসেন বেশ কয়েকজন বাম কর্মী-সমর্থক। নেতৃত্বে ছিলেন পাঁশকুড়ার বাম বিধায়ক তরুণ নেতা ইব্রাহিম আলি।

মুখে স্লোগান, হাতে ঝান্ডা নিয়ে নবান্নের সামনে হঠাৎ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে তাঁদের বাধা দেয়। সেখানেই বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, টেনেহিঁচড়ে প্রিজম ভ্যানে বেশ কয়েকজনকে তোলা হয়। অন্যদিকে, নবান্ন অভিযানকারীদের আটকাতে সকাল থেকেই তৎপর ছিল কোলকাতা পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশ। হাওড়া শহরের বেশ কয়েক জায়গায় ব্যারিকেড করা হয়েছিল। সকালে অতর্কিতে নবান্নের সামনে বিক্ষোভকারীরা পৌঁছে যাওয়ায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। হাওড়া শহরে ব্যারিকেডের সংখ্যাও বাড়ানো হয়। দুপুরে কোলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে কয়েক হাজার ছাত্র-যুবকে নিয়ে শুরু হয় মিছিল। এস.এন ব্যানার্জী রোড ও ডোরিনা ক্রসিংয়ের সংযোগস্থলে মিছিল আটকাতে দ্বি-স্তরীয় ব্যারিকেড করা হয়। মিছিল ধর্মতলার কাছে এস.এন ব্যানার্জী রোডে পৌঁছলে তা আটকে দেয় পুলিশ। মেটাল ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।

পুলিশের সাথে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। আন্দোলনকারীদের আটকাতে পুলিশের তরফে জল কামানের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর সরকার বিরোধী স্লোগান তুলে ব্যারিকেড টপকানোর চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। মুহুর্তের মধ্যে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ধর্মতলা চত্বর। আন্দোলনকারীদের দাবি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর পুলিশ হামলা চালায়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, নির্বিচারে ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশ এদিন লাঠিচার্জ করে। ডোরিনা ক্রসিংয়ে পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিলে আন্দোলনকারীরা মৌলালিতে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ নির্বিচারে ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা চালিয়েছে। কোলকাতা পুলিশ কমিশনারকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।

সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান-বিক্ষোভ চলার পর বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। এদিনের ঘটনায় শতাধিক বাম কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের লাঠির ঘায়ে বহু কর্মী-সমর্থকের মাথা ফেটে গেছে। কাঁদানে গ্যাসের প্রভাবে বহু আন্দোলনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে বহু আহত বাম যুব কর্মী ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে। পুলিশেরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, ছাত্র-যুবদের উপর পুলিশের নির্বিচারে লাঠিচার্জের প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘন্টার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছে ১৬ টি বাম সংগঠন। কংগ্রেসও এই বন্ধকে সমর্থন জানিয়েছে। ছাত্র-যুবদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজ্যের মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্ধে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাম নেতৃত্ব।