নিজস্ব সংবাদদাতা : আকাশে ভেসে বেড়েছে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। আপমনে সাদা কাশ ফুল মাথা দোলাচ্ছে। ভোরের বেলা শিশির ভেজা শিউলি জানান দিচ্ছে শরৎ এসেছে। শরৎ মায়ের আগমনী সুর দিকে দিকে। পুজো পুজো গন্ধে মম করছে বাংলার আকাশ বাতাস।ঠিক প্রাক পুজো মুহূর্তে সেই উৎসবের অন্যতম অঙ্গ ঢাকিরা কেমন আছেন তা দেখতেই আমাদের ক্যামেরা পৌঁছে গেল হাওড়া আমতা-১ নং ব্লকের উদং গ্ৰামের রুইদাস পাড়ায়। এই গ্রামের ঢাকিদের চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।পুজোর আর মাত্র দু’দিন বাকি। চারিদিকে পুজো পুজো প্রস্তুতি তুঙ্গে। মাঠে কাশফুলের দোলা, আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়ানোর বয়ে আনছে আগমনের বার্তা।
পুজোর বার্তা আরও বহন করে আনে ঢাকের আওয়াজ। সেই ঢাকে বাদ্দি মনকে খুশিতে ভরিয়ে তোলেন৷ এই গ্রামের যে চল্লিশটি পরিবার আছে তারা বিভিন্ন পুজোতে ঢাক বাজিয়েই সংসার চালায়। উদং গ্রামে তাঁদের বসবাস ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। জুতো তৈরি বা সেলাই এবং প্লাস্টিকের কাজ করেই তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কথা প্রসঙ্গে মথুর রুইদাস, রবীন রুইদাস,বাবলু রুইদাস, আনন্দ রুইদাস, স্বপন রুইদাস, শম্ভু রুইদাসরা জানালেন, শাস্ত্রীয় মত অনুসারেই ঢাক-ঢোল-কাঁসি এই তিন ধরনের বাজনা একসঙ্গে বাজাতে হয়। বাজনা গুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা বা নিয়ম-কানুন নেই বলেও তাঁরা জানালেন। এখন গ্রামের পুজো বা পাল-পার্বন ছাড়া বাইরে থেকে বাজানোর বরাত আগের মতো আর পান না। এখন চামড়ার অভাবে পলিমারের ছাউনিতে যে ঢাক তৈরি হয়, সেই পলিমারের তৈরি ঢাকের চেয়ে চামড়ার ঢাকের আওয়াজ অনেক বেশি সুন্দর।
সারা বছরে এখন দুর্গাপুজো, লক্ষী পূজা আর কালীপুজো ছাড়া আর খুব একটা বিশেষ বাজানোর তারা বরাত পান না। নতুন প্রজন্মের কেউই এখন আর ঢাক বাজানোর পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইছেন না। সবাই অন্য পেশায় চলে যেতে চাইছেন। আসন্ন দুর্গাপুজো বা শারদৎসবের মরসুমে খুব একটা ঢাক বাজানোর বরাত পান নি কেউই। আর সরকারি কিছু পেয়েছেন কিনা সে প্রশ্নের উত্তরের সবাই এক বাক্যে বললেন ‘না’। অর্থাৎ, গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি অন্যতম অঙ্গ এই ঢাক বাজানোর সঙ্গে যুক্ত মানুষজন বা ঢাকির এখন চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন।