নিজস্ব প্রতিবেদক : দুয়ারে বসন্ত এলেও এখনও হাল্কা শীতের আমেজ রয়েছে। বেলা বাড়লে কমছে শীত। তার মাঝেই হাজির বাঙালির প্রেমের পরব। সরস্বতী পুজো মানেই বাঙালির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সরস্বতী পুজোতে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রেমের আনন্দে মেতে উঠল বাঙালি যুগলরা। মঙ্গলবার সেই ছবিই ধরা পড়ল গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের উদং কালীমাতা আশ্রম প্রাঙ্গণে। বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে আশ্রম চত্বরে উপচে পড়ল ভিড়।
এখানে কোনো সরস্বতী পুজো না হলেও প্রতিবছর এই বিশেষ দিনে এখানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। ‘নিউনর্মাল’য়েও সেই ভিড় অব্যাহত ছিল। দামোদর তীরবর্তী এই আশ্রম প্রাঙ্গণে রয়েছে অনন্য কারুকার্যমন্ডিত একাধিক মন্দির, সুসজ্জিত মরসুমি ফুলের বাগান, রঙবেরঙের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছ।
এই সৌন্দর্যের টানে এবারের বসন্ত পঞ্চমীতেও বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসেছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে। বেলা যত গড়াতে থাকে কালো মাথার ভিড় ততই বাড়তে থাকে। ভিড়ের সঙ্গে সেলফির হিড়িক সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
শুধুমাত্র যুগলরাই যে ভিড় জমিয়েছিলেন তা নয়। বহু বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্যও উদংয়ের এই আশ্রমে এদিন এসেছিলেন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়া অনির্বাণ পালের কথায়,”বাড়ির কাছে হলেও প্রতিবছরই এই সময়ে আশ্রমে আসি। জায়গাটা খুব সুন্দর। এখন আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে বলেই একটু সময় কাটাতে বন্ধুরা চলে আসি।”
এরকমই অসংখ্য ছাত্র-যুব-নারীর ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রামীণ হাওড়ার এই পর্যটনস্থল। এদিন আশ্রম সংলগ্ন মাঠে মেলাও বসেছিল। উদং কালীমাতা আশ্রম কমিটির অন্যতম কর্তা গোপাল চন্দ্র ধাড়া জানান,”প্রতিবছরের মতো এবারও বসন্ত পঞ্চমীতে হাজার হাজার মানুষ আশ্রমে এসেছিলেন। আশ্রম চত্বরে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য সি.সি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তার সঙ্গে বহু স্বেচ্ছাসেবকের উপর দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান,”করোনা সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আশ্রম চত্বরে যেমন বিভিন্ন পোস্টার লাগানো হয়েছে তেমনই সারাদিন মাইকে সচেতনতার প্রচার চালানো হয়েছে।”
পাশাপাশি, প্রবেশদ্বারে থার্মাল স্ক্রিনিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে গোপাল বাবু জানান। এদিন আশ্রম প্রাঙ্গণে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’-এর পক্ষ থেকে দর্শক ক্যুইজেরও আয়োজন করা হয়েছিল। বহু মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে এই প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দেন। আশ্রম প্রাঙ্গণে আমতা থানার পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, আমতার উদং কালীমাতা আশ্রম ইতিমধ্যেই বাংলার বুকে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট রূপে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, এস্টারের মতো বিভিন্ন ফুলের সমারোহে বর্ণময় হয়ে উঠেছে এই গ্রামীণ আশ্রম।