স্থানীয়রা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, অসুস্থ অসীমাকে বাঁচাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাদিক, জামির, বাসাররা

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : উলুবেড়িয়া হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া বছর ৫৩ এর অসীমার পরিবার, আত্মীয়দের সামর্থ্য নেই চিকিৎসার খরচ জোগানোর। এই দুঃসময়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় মুসলমান যুবকরা। অসীমাকে বাঁচাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে চাঁদা তুলছেন জামির, সাদিক, আনসার, বাসাররা। সূত্রের খবর, পাঁচলা থানার ভাসাটোলা মল্লিকবাগানের প্রৌঢ়া অসীমা হাজরার গত ২৪ শে এপ্রিল ব্রেনস্ট্রোক হয়। তারপর থেকে বাড়িতে পড়েই যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকেন অসহায় অসীমা। অর্থের অভাবে বাড়িতে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করে যখন মৃত্যুর দিকে ক্রমে ধাবিত হচ্ছিলেন তিনি তখন কার্যত ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তারপাশে এসে দাঁড়ান জামির, সাদিকদের মতো স্থানীয় উদ্যোমী যুবকরা। অসীমার এহেন অবস্থার খবর পেয়েই তাঁরা রবিবার সকালে প্রৌঢ়াকে উদ্ধার করে গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যান। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

চিকিৎসার জন্য আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় জামির, আনসাররা চাঁদা তুলে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়। রবিবার সকাল থেকেই মাঠে নামেন হাকোলা অঞ্চলের একদল মুসলিম যুবক। তাঁরা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে গেছেন অসীমার পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যে। অসীমাকে বাঁচাতে শুধু মাত্র চাঁদা তুলেই ক্ষান্ত থাকেনি এলাকার উদ্যোমী যুবকরা। রোজা রেখেই রবিবার থেকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে পড়ে আছেন বাসার। সোমবার অসীমাকে নিয়ে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে সি.টি.স্ক্যান বিভাগে যাওয়ার পথে আবু বাসার জানান, “হত দরিদ্র এই পরিবার.অসীমার দু’ই ছেলে থাকলেও তারাও আর্থিকভাবে অসহায়। ওনার এক মেয়ে ধুলাগোড় একটি কারখানায় ১২০ টাকা রোজে কাজ করত। লকডাউনের জেরে তারও কাজ নেই। এলাকার কেউ ওদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। রবিবার সকালে অসীমার ভাই প্রভাস সাঁতরা ফোন করে ওর দিদির শরীর খারাপের কথা জানায়।”

আবু বাসার আরও বলেন, “অসীমার বাড়ি পাঁচলার শুভরআড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মল্লিকবাগান এলাকায়। আর আমরা থাকি হাকোলা অঞ্চলে।দু’টি অঞ্চলের সীমানা এলাকাতেই বাস করেন অসীমা হাজরা। খবর পাওয়ার পরই আমরা এলাকার যুবকরা মিলে ওনার বাড়িতে যাই।দেখি এক চিলতে ঝুপড়ি ঘরটির মধ্যে বিছানাই শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন  অসীমা।বিন্দুমাত্র দেরি না করে ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” অসীমার ভাই প্রভাস সাঁতরার কথায়, “আমাদের সামর্থ্য নেই দিদির চিকিৎসার খরচ জোটানোর। বিষয়টি জানতে পেরেই যে ভাবে বাসার, সাদিক, আনসাররা হেল্প করছে তাতে আমি খুশি যে দিদি অন্তত ওদের জন্য চিকিৎসা পাবে। কৃতজ্ঞ ওদের কাছে।” সারা বিশ্বে যখন ধর্ম নিয়ে এতো হানাহানি, রক্তপাত, মৃত্যুমিছিল সেই দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় বেড়াজালের গন্ডী টপকে সাদিক, আনসার, জামিরদের এই কর্মকান্ড আবারও সমাজের দ্বারে বার্তা দিয়ে যায় – মানুষ মানুষের জন্য…।