মা ক্যান্সারাক্রান্ত, বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন, তবুও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে মাধ্যমিকে ৬৮০ পেল বাগনানের কালাম

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : বয়সে সদ্য কিশোর হলেও মাথার উপর দিয়ে প্রবল ঝড়ঝাপটা বয়ে গেছে। ক্যান্সারআক্রান্ত মা’য়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে কার্যত পথে বসতে হয়েছে। কখনো অনাহারে আবার কখনো অর্ধাহারে দিন কেটেছে। রাতের পর কেটেছে হাসপাতালের করিডরে। তবুও নিজ স্বপ্ন থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি বাগনানের সদ্যকিশোর সেখ আব্দুল কালাম। প্রতিমুহূর্তে নিজের উপর আস্থা রেখে দাঁতে দাঁত চেপে সে লড়াই চালিয়েছে। সাথে কঠোর অধ্যাবসায় আর অসীম ধৈর্য্য। তারই ফলস্বরূপ কালাম মাধ্যমিক পরীক্ষায় বাগনান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৬৮০ পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কালামের মা ক্যান্সার আক্রান্ত,বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। কালামের কথায়, “পরীক্ষার সপ্তাহখানেক আগেই মা’কে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। পড়ার সময় অনেকটাই কম পাওয়া গেছে।”

অর্থাভাবে জোটেনি গৃহশিক্ষক। তবে তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই বিনা পয়সাতেই তাকে পড়িয়েছেন। এবার সে মাধ্যমিকে বাংলায় পেয়েছে ৯৮, ইংরেজিতে ৯৬, অঙ্কে ১০০, ইতিহাসে ৯৬, ভূগোলে ৯৭, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯ এবং পদার্থবিজ্ঞানে ৯৮ পেয়েছে। তবে রাজ্যের প্রথম দশে ঢুকতে না পারায় কিছুটা হলেও আক্ষেপ রয়েই গেছে এই মেধাবীর। কালামের মা আরসেদা বেগম জানান, “২০১৬ সালের শেষের দিকে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং বর্তমানে তা আরো ছড়িয়ে গিয়েছে শরীরের বিভিন্ন অংশে।” ২০১৮ সালে চিকিৎসক জানান তার চতুর্থ স্টেজ চলছে ক্যান্সারের ফলে জীবন সরু সুতোর উপর দিয়ে ঝুলছে। শেষ মাস তিনেক ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসা ও ঠিকঠাক করতে পারছেন না তারা।

কালামের বাবা তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সেখ সইফুদ্দিন আহমেদের সঞ্চিত শেষ সম্বলটুকু শেষ হয়ে স্ত্রীর চিকিৎসায়। কোনোরকমে পেনশনের টাকায় চিকিৎসাটুকুই চলছে। আরসেদা আক্ষেপের সুরে জানান, “প্রায় সারাদিনই যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি। তা-ই ছেলের দিকে একদমই নজত দিতে পারিনি। সংসার সামলানো-পড়াশোনা সবকিছুই কালামকে নিজেকেই করতে হয়েছে। সঙ্গে তাকে সাহায্য করেছে কলেজ পড়ুয়া দিদি।” বাগনানের এই কৃতি পড়ুয়ার দু-চোখে ভাসছে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু, কীভাবে সে এগিয়ে নিয়ে যাবে নিজের উচ্চশিক্ষার বিপুল ব্যয়ভার, কীভাবেই বা হবে মা’য়ের চিকিৎসা কিমবা জুটবে ভরপেট আহার —এখন সেই চিন্তাতেই সাফল্যের আনন্দে কিছুটা হলেও বিষাদের সুর।