নিজস্ব সংবাদদাতা : গ্রামীণ হাওড়ার শ্যামপুর-২ ব্লকের হাদিসা খাতুন। বছর এগারোর কিশোরীটি শৈশবে আর পাঁচটা শিশুর মতোই চেয়েছিল খেলাধুলা করতে। চেয়েছিল নিজের পায়ে ভর করে শিক্ষাঙ্গনে যেতে। কিন্তু তার এগিয়ে চলার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। তবু সে লক্ষ্যে অবিচল। প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালকে ছিন্ন করে মায়ের কোলে চেপেই বড়ো হওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ঘুঘুবেশিয়া জুনিয়র হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এই ছাত্রী।
হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কোনোরকমে চার সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালান সেখ আব্দুল। আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে মেয়ের জন্য হুইল চেয়ার কেনাও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। শিক্ষার মশাল জ্বেলে শত শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালকে ছিন্ন করে জীবনের পথে এগিয়ে চলা এই কিশোরীর লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে তার পাশে এগিয়ে এলেন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী বিদিশা পারভিন। রফিকুল ও বিদিশার একমাত্র পুত্র বিহান ইসলাম বীর ১৮ ই ডিসেম্বর ৫ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে।
বিহানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার বাবা-মা ও পরিবারের সহযোগিতায় রবিবার আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’-এর পক্ষ থেকে শ্যামপুর-২ ব্লকের সীতাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির পক্ষ থেকে হাদিসাকে হুইল চেয়ার, শিক্ষাসামগ্রী, সোয়েটার, টুপি, চারাগাছ, মিষ্টি ও চকোলেট তুলে দেওয়া হয়। নতুন অবলম্বন পেয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত হাদিসা।
আবেগঘন কন্ঠে হাদিসা জানায়, “এতদিন মায়ের কোলে চড়ে ইস্কুলে যেতাম। কিন্তু সবসময় তা হয়ে উঠত না।এবার গাড়ি চড়ে নিয়মিত ইস্কুল ও পড়তে যাব।” বিহানের মা বিদিশা পারভিনের কথায়, “এবার ছেলের জন্মদিনটা একটু অন্যভাবে পালন করার চেষ্টা করলাম। এ এক অন্য অনুভূতি।” রবিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আমড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়ন্ত কুমার পাত্র, উলুবেড়িয়ার কালীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ ফারুক, বিশিষ্ট শিক্ষক অসিত প্রামাণিক সহ অন্যান্যরা।
‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’-এর সম্পাদক তাপস পাল বলেন, “আমাদের সংস্থা শিক্ষায় স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে হাওড়া জেলাজুড়ে কাজ করে। পড়ুয়াদের শিক্ষার পাশাপাশি পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়েও আমরা সচেতন। বিহানের পরিবারের তরফে বিশেষভাবে জন্মদিন পালনের প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা হাদিসাকে হুইল চেয়ার দেওয়ার কথা বলি। ওনারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। সেই মোতাবেক হাদিসাকে হুইল চেয়ার তুলে দেওয়া হল। এবছর আমরা মোট ৩ জনকে এখনো অব্ধি হুইল চেয়ার দিলাম।” তাপস বাবু জানান, হুইল চেয়ারে ভর করে অধরা স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলুক হাদিসা। আমরা সাথে আছি।