রঘুনাথের শেষকৃত্যে ত্রাতার ভূমিকায় পিয়ার, আমিনুররা, সম্প্রীতির অনন্য ছবি উলুবেড়িয়ায়

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : সারা বিশ্বজুড়ে যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িক অশান্তি, দাঙ্গা ঠিক সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আব্দুর, আমিনুর, আতিয়ার, জাহাঙ্গীররা সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার রঘুনাথ কুমার। তাঁরই শেষকৃত্যসম্পন্ন করতে এগিয়ে এলেন জাহির, পিয়াররা। এমনই ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকল গ্রামীণ হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভার ২৫ নং ওয়ার্ডের ফতেপুর এলাকার মানুষ। সূত্রের খবর, গতকাল সকালে বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন রঘুনাথ কুমার। তৎক্ষনাৎ খবর পেয়েই রঘুনাথের বাড়িতে পিয়ার আলি সহ প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁরাই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

কিন্তু, ততক্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন বছর একষষ্টির রঘুনাথ। আদপে ঝাড়খন্ডের সিংভূম জেলার বাসিন্দা রঘুনাথ দীর্ঘদিন ধরে উলুবেড়িয়ায় ভাড়া থাকতেন। ফলে তাঁর আত্মীয়দের বেশিরভাগই ঝাড়খন্ডে থাকেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার এরাজ্যে পূর্ণ লকডাউন থাকায় গতকাল তাদের পক্ষে উলুবেড়িয়া আসা সম্ভব ছিলনা। অন্যদিকে লকডাউনের জেরে দোকানপাটও বন্ধ। ফলে সৎকার্যেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেখানেও আতিয়ার, আব্দুর, আমিনুররাই মুশকিল আসান। মৃতের ভাই রামেশ্বরকে সাথে নিয়ে ফুল, খাটিয়া কেনা কিমবা স্বর্গরথ ভাড়া করে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া; এমনকি চিতাতে শব তুলে দেওয়া —তুমুল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পরম নিষ্ঠার সঙ্গে সমস্ত কাজটা করেন পিয়ার, জহিরুদ্দিনরাই।

হুগলী নদী তীরবর্তী জগদীশপুর শতমুখী শ্মশানে রঘুনাথের শেষকৃত্যের সময় রামেশ্বরকে শ্বেতবস্ত্র পরিয়ে দেন আতিয়াররাই। জানা গেছে, রঘুনাথ খুব অল্প বয়সে মা’য়ের হাত ধরে দু’ই ভাই-বোনকে সাথে নিয়ে পেটের তাগিদে উলুবেড়িয়ায় চলে আসেন। উলুবেড়িয়ার ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী এসহাকের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে রঘুনাথের মা আশ্রয় নিয়েছিল। তখন দুঃস্থ, অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছিল হাজী এসহাক। হাজী এসহাক নিজের একটি বাড়িতে আশ্রয় দিলেও রঘুনাথদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নিতেন না বলে জানা গেছে। পরবর্তী সময়ে হাজী এসহাকের ছেলে পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী পিয়ার আলীও বরাবর সহায়তা করেছেন রঘুনাথদের। তিনিও বাবার মতোই কোনো ভাড়া নিতেন না রঘুনাথদের কাছ থেকে। এভাবেই পিয়ারদের বাড়িতে প্রায় চার যুগেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন রঘুনাথ।

পেশায় ট্রলি চালক পরবর্তীকালে বিয়ে করেন। পিয়ার আলির কথায়, “রঘুনাথ ভিন্ন ধর্মের হলেও ওর পরিবারের সাথে আমাদের আত্মিক বন্ধন গড়ে উঠেছে। বেশ কয়েকমাস আগে রঘুনাথের হৃদরোগ দেখা দেয়। তারপর থেকে আর ট্রলি চালাতে না। বাড়িতেই থাকতো। আমরাই ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতাম। রঘুনাথের এক ভাই রয়েছে। সেও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তার হাঁটাচলায় সমস্যা রয়েছে। লকডাউনের জেরে রঘুনাথের সৎকার্য করতে যাতে কোনোরকম সমস্যা তৈরি না হয় তার জন্য আমরা সবাই মিলে এগিয়ে আসি।”