রহিমের রক্তে রামের নয়া জীবন, মেলে মনুষ্যত্ব, ধর্ম বহুদূর

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : করোনা নিয়ে একসঙ্গে লড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভারতেও চলছে করোনা যুদ্ধে হার না মানার অদম্য লড়াই। জাতি – ধর্ম – বর্ণের বিভেদ ভুলে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিক। তারই মধ্যেই দেশকে ধাক্কা দিয়েছে দিল্লির নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় জমায়েতের ঘটনা। পরমুহূর্তেই আবার রামনবমীর পুজো দেওয়ার ধুম অবাক করছে ঘরে বসে চরম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়া মানুষকে। সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে রাম-রহিমের একে ওপরের দিকে আঙুল তোলার। এমনই এক অদ্ভুত সংকটময় পরিস্থিতিতে রক্ত মেলাচ্ছে ভারতকে। দিচ্ছে রাম রহিমের আসল পরিচয়। যার নাম মনুষ্যত্ব। রক্ত মেলায় রাম রহিমকে, ধর্ম বহু দূর।

এমনই এক বিরল ঘটনার সাক্ষাৎ প্রমান গ্রামীন হাওড়ার আমতা – ২ ব্লকের ভাটোরার বাসিন্দা আরিফ রহমান। আরিফ জানিয়েছেন, “সারাদেশ জুড়ে খাদ্যের অভাবের সঙ্গে দেখা গেছে চরম রক্তসংকট। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সবচেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, সেই সঙ্গে মুমূর্ষু রোগীদের সমস্যা মেটাতে হাসপাতালে হাজির হয়েছিল জেলা যুব তৃণমূল তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যরা। তার মধ্যে আমিও একজন। সেখানেই এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই।” কী সেই অভিজ্ঞতা? আরিফের কথায়, “একজন বোরখা পরিহিত মহিলা আমাকে এসে জিজ্ঞাসা করেন আমার রক্তের শ্রেণী কী? আমি বললাম B+। কিন্তু ওনার দরকার ছিল O+ রক্তের। ওনার রক্তের চাহিদা মিটল আমার বন্ধু সমরেশের O+ রক্তে।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাস।আমার রক্তের গ্রুপ মিলল তিথি বোস নামের এক থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে।”

এরপরেই তিনি বলেন ,”রক্তদান করে আমার উপলব্ধি হয়,এটাই আমাদের দেশ,এটাই ধর্ম ,যাকে সকলে বলি মানব ধর্ম।ধর্মের রীতিনীতি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু যেখানে জনহিতকর কিছু নেই সেটা ধর্ম হতে পারে না।”সংগঠনটির জেলা সভাপতি সুকান্ত পাল আরিফের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “এঁদের মতো উদ্যোমী যুবকরা আছে বলেই আমরা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা উঁচু করে লড়াই করার সাহস পাই।” আরিফ রহমান আরও বলেন, “এর আগে বহুবার বিভিন্ন জায়গায় স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছি। কিন্তু এহেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই প্রথম। তাই আমি মনে করি দেশের এই কঠিন সময়ে আমাদের চিন্তাশীল হতেই হবে। সংঘবদ্ধ লড়াইটা বড়ো প্রয়োজন। বন্ধ হোক ধর্ম, রাজনীতির নামে ভেদাভেদ ও হানাহানি। দিনের শেষে আমরা তো মানুষ। “আরিফদের মতো যুবকদের এই মানসিকতাই যেন সমাজের দ্বারে আবারও বার্তা দিয়ে যায়, “সবার উপর মানুষ সত্য…।”