নিজস্ব সংবাদদাতা : এলাকার কালি পূজো হোক বা দূর্গা পূজো অথবা শীতলা পূজো বা নীল এর পূজো, সব পূজোতেই দেবী হিসাবে পূজিত মা রত্ন বালা দেবী। এই এলাকায় অন্য কোনো মূর্তির পূজো হয়না। শুধু কি তাই পূজিত দেবীর নামের সাথে সাদৃশ্য থাকায় রতন নামের কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়না এই গ্রামে। রতন নাম রাখা নিয়ম বহির্ভূত এই গ্রামে। উলুবেড়িয়ার শ্যামপুর থানা এলাকার রতনপুর গ্রাম। মা রত্ন বালার নাম থেকেই এই এলাকার নামকরণ না ঠিক উল্টোটা, জানেননা এলাকার মানুষ। কারণ পুরো বিষয়টিই যে অতি প্রাচীন। গ্রামের সমস্ত মানুষের মন জুড়ে রয়েছেন মা রত্ন মালা। গ্রামের মানুষরা জানালেন পূর্ব পুরুষদের কাছে শোনা কথা অনুযায়ী বেশ কয়েকশ বছর আগে এই গ্রামের পাশ দিয়েই বইত দামোদর নদ। বানিজ্য করতে গিয়ে এই এলাকায় এসেছিলেন চাঁদ সওদাগর। তখন সকাল সন্ধে দুই বেলা নিয়ম করে দামামা বাজানো হত এই এলাকায়। সেই নিয়ম এখনও মেনে চলেন এখানকার মানুষ। শুধু দামামার পরিবর্তে বাজানো হয় ঢাঁক। মা রত্ন দেবীর মন্দির তার থেকেও প্রাচীন। এখানে ঠিক কি ভাবে বা কবে আবির্ভাব হয়েছিল মা রত্ন দেবীর তার কোনো ইতিহাস জানা নেই এই এলাকার মানুষের। মন্দিরের এক সেবায়েত তথা পূজারী নরোত্তম রায় জানালেন কবে দেবীর অবির্ভাব তা তার জানা নেই।
পূর্ব পুরুষদের কাছে শোনা কথা অনুযায়ী দেবীর প্রথম সেবায়েত ছিলেন শঙ্কর সিং নামের এক লোক। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন, রত্ন নামের তার এক পোষ্য মেয়ে ছিল। কোনা এক কারণে দেবী অসন্তুষ্ট হয়ে রত্ন নামের মেয়েটিকে গিলে নেয়। তার পর থেকেই দেবীর আরাধনার জন্য বর্ধমানের রাজা তার পূর্ব পুরুষদের বাগনানের দেউলটি গ্রাম থেকে এই এলাকায় নিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকেই বংশ পরম্পরায় দেবীর পূজো করে আসছেন তারা। তার মতে এখানকার দেবী খুবই জাগ্রত। অনেক মানুষের অনেক কঠিন অসুখ সেরে যায় এখানে এসে মায়ের কাছে একদিন উপোষ দিলে। পাশাপাশি তিনি আরও জানান এই এলাকায় মা রত্ন দেবী ছাড়া অন্য কোনো মূর্তির পূজো করা হয়না সেই কারণে ধূমধাম করে কালি পূজো হলেও কালি রূপে পূজিত হবেন মা রত্ন বালা। আরেক পূজারী প্রভাস চক্রবর্তী মা রত্ন বালা দেবীর অনেক অলৌকিক কর্মের কথা জানিয়ে বলেন এই গ্রামে রত্ন বালা দেবীর নামের সাথে সাদৃশ্য থাকায় কারো রতন নাম রাখা হয়না। তিনি আরও জানান যাতে কোনো ভাবেই কোনোদিন দেবীর পূজোয় ব্যাঘাত না ঘটে সেইজন্য বংশ পরম্পরায় রায় পরিবারের পাশাপাশি তাদের পরিবারকেও পূজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন দুই বেলা ভাগ করে দেবীর পূজো সম্পন্ন করেন তারা। তার কথায় ১৯৭৮ সালের ভয়ঙ্কর বন্যার সময়তেও বন্ধ হয়নি দেবীর পূজো। কলা গাছের ভেলায় চেপে মন্দিরে এসে পূজো সম্পন্ন করতেন সেবায়েতরা। তাদের পূজিত দেবীই তাদের কাছে সব দেবীর রূপ। তাই অন্যকোনো মূর্তি পূজো করা হয়না এই এলাকায়। কালি পূজোতেও তার অন্নথা হবেনা বলেও তিনি জানান।