হাওড়ায় পুজোমন্ডপে বাস্তব জীবনের করুণ কাহিনী, দর্শনার্থীদের ভিড়

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : কবি লিখেছিলেন,”বন্যেরা বন্যে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে” — একজন গর্ভধারিণী মা তাঁর শিশুকে তিল তিল করে বড়ো করে তোলেন। সমস্ত কিছু থেকে সর্বস্ব দিয়ে মা তাঁর শিশুকে আগলে রাখেন। গর্ভবতী অবস্থায় মাতৃ গর্ভ ও শৈশবে মাতৃক্রোড়ই সন্তানের সবচেয়ে নিরাপদ ও শ্রেষ্ঠ স্থান। তবে বর্তমান সমাজে চিত্রটা বেশ কিছুটা বিরূপ। গর্ভধারিণী মা অভাবে-অনটনে, লাঞ্চনা, বঞ্চনায় দিন কাটাচ্ছেন, আর সন্তান প্রাসাদসম অট্টালিকায় দিনযাপন করছেন। এছবি হামেশাই দেখা যাচ্ছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বহু মা’য়েরই ঠাঁই মেলেনা সন্তানের প্রাসাদসম বাড়িতে। ডিগ্রি বা পুঁথিগত শিক্ষার চল বাড়লেও কোথাও যেন গিয়ে মানবিকতার শিক্ষাটা আজও ঘাটতি রয়ে গেছে। এবার পুজোয় এরকমই এক বঞ্চিত মা’য়ের করুণ কাহিনীর প্রকাশ ঘটেছে হাওড়ার ডোমজুড় বিপন্নপাড়া আনন্দ আশ্রম আয়োজিত দুর্গোৎসবের মন্ডপে। মন্ডপের বাইরে স্থান পেয়েছে মায়ের অজস্র আঁচল যে আঁচলের ছায়ায় থেকে একজন শিশুর বেড়ে ওঠা। মন্দিরের অন্দরকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়েছে মন্ডপে। প্রথমেই প্রবেশ করলে দেখা মিলবে এক গর্ভধারিণী মা’য়ের। মা বসে রয়েছেন, ঠিক তার উপরে রয়েছে একটি শিশু। সেই শিশু মাতৃদুগ্ধ এবং ফিডারে মুখ দিয়ে বেড়ে উঠছে। তারপর শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে ছেলের কর্মজীবনে প্রবেশ করা। কর্মজীবনকে জাঁতাকলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…

কর্মজীবনে প্রবেশ করে সেই ছেলে একটু একটু করে মা’কে ভুলে যাওয়া। সেই চিত্রই মন্ডপে শৈল্পিক কারুকার্যের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্ডপের দ্বিতীয় অংশে চোখে পড়বে অজস্র ঘড়ি যেখানে ছেলের মা’য়ের খোঁজ নেওয়া, মায়ের দেখাশোনা বা মায়ের প্রতি কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়ানো — সেটা কী বোঝানোর জন্য অসংখ্য ঘড়ি যাএকটু একটু করে সময় পার হতে হতে জীবনের শেষ সময়। দেখা যায় ছেলের বিশাল অট্টালিকা থেকে মা’কে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। কখনো বৃদ্ধাশ্রম কখনো ফুটপাত আবার কখনো বা রাস্তায়। একজন বৃদ্ধ মা তার সন্তানের ফ্ল্যাট বা বাড়িতে ঠাই হয় না তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে রাস্তায় বা বৃদ্ধাবাসে, তা বোঝাতে মন্ডপের মাঝখানেই রয়েছে একজন বৃদ্ধা মা তাকে ফেলে দেয়া হচ্ছে জেসিবি মেশিন এর দ্বারা। ঠিক তার উপরে অর্থাৎ মণ্ডপের সিলিংয়ে অজস্র জানালা দরজা, কোন দরজা খোলা কোন দরজা বন্ধ এর মূল বিষয় একজন মায়ের কাছে তার সন্তানের জন্য আজীবন দরজা খোলা তবে একজন সন্তান তার বাড়ি বা ফ্ল্যাটের দরজা মায়ের জন্য বন্ধ করে দেয় কখনও। একজন মা যে-কোনো পরিস্থিতিতে আজীবন ছেলের মঙ্গল কামনায় ব্রতী! তবুও শেষ সময় গর্ভধারিণী মায়ের পরিণতি দেখানো হয়েছে, মা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন সেই মুহূর্তেও সন্তান অর্থ উপার্জনেই মত্ত। একজন মায়ের ঋণ যে কখনো শোধ করা সম্ভব না, যে মা সন্তানের মঙ্গল কামনা ছাড়া আর কোন কিছু ভাবে না সেই মা লাঞ্ছিত। এই সমাজকে সচেতন করতে বিপন্ন পাড়া আনন্দ আশ্রমের অভিনব ভাবনায় গড়া পুজো মন্ডপ।