বাড়িজুড়ে শুধুই অন্ধকার, মাধ্যমিকে ৫৯৯ পেয়ে স্কুলের সেরা উলুবেড়িয়ার সইদুল

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : এতোদিন অব্ধি বাড়িতে শিক্ষার আলো জ্বলেনি। পারিপার্শ্বিক পরিবেশও পড়াশোনার অনুকূল নয়। এমন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দাঁড়িয়েও শিক্ষায় স্বপ্নপূরণের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বছর পনেরোর কিশোর সেখ সইদুল আলম। উলুবেড়িয়া থানার হুগলী নদী লাগোয়া হীরাগঞ্জের একটি একচিলতে ভাঙা ঘরে মা ও তিন ভাইকে নিয়ে কোনওরকমে জীবনযাপন। তিন সন্তানের ভরপেট আহার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্যা সইদুলের মা’ মাসুরা বেগমকে। মাসুরা বেগম স্থানীয় হীরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সাফাই কর্মী হিসাবে কাজ করে মাসে ৮০০ টাকা মেলে। লকডাউনের জেরে তাও কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০ টাকায়।

এহেন প্রতিকূল লড়াইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়েও জাগরণের স্বপ্ন ভেসে ওঠে গ্রামীণ হাওড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এই প্রান্তিক পড়ুয়ার চোখে।ভাঙা ঘরে রাতের পর রাত জেগে স্বপ্ন গড়ার খেলায় মেতে ওঠে অঙ্ক পাগল এই মেধাবী পড়ুয়া। ভাতের হাঁড়ি না চড়লেও অঙ্ক কষা থেমে থাকে না। তার এই অদম্য ইচ্ছেশক্তি আর জেদকে পাথেয় করে সমস্ত প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালকে ছিন্ন করে এবার মাধ্যমিকে হীরাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ নম্বর (৫৯৯) পেয়েছে সইদুল।

অর্থাভাবে টিউশন বা কোচিং সেভাবে না জুটলেও পড়াশোনার বিষয়ে তাঁর স্কুলের স্যারেরাই সব। ছুটির শেষে গাইড করা অথবা বই-খাতা কিনে দেওয়া; সব বিষয়েই এগিয়ে এসেছেন বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা। পাশাপাশি, সইদুলের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই আমতার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন দেখার উজান গাঙ’ -এর পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লকডাউন শুরুর কয়েকদিন আগেই এই স্বেচ্ছাসেবী সংশার দু’ই প্রতিনিধি সইদুলের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন বিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন বই ও শিক্ষাসামগ্রী। সংগঠনের পক্ষে তাপস পাল জানিয়েছেন, “সইদুলের এই গৌরবে আমরাও সমানভাবে গর্বিত ও আনন্দিত। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও কুর্নিশ সইদুলের এই হার না মানা লড়াইকে। সমস্ত প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালকে ছিন্ন করে এগিয়ে চলুক সইদুলের মতো অগণিত মেঘে ঢাকা তারারা।”