গোঁফওয়ালা রামের মাথায় পাঁচ সরস্বতী, বাগদেবীর আরাধনায় মাতে হাওড়া

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

বিশেষ প্রতিবেদক : যুগ-যুগ ধরে হাওড়া বাসীর আরাধ্য দেবী হলেন সরস্বতী। আজও তাই রামের মাথার উপর বসেন বাগদেবী। বিখ্যাত রামরাজাতলায় গেলেই দেখা মিলবে সেই বিরল দৃশ্যের। তাও একটা নয় পাঁচ-পাঁচটি সরস্বতী। একমাত্র সরস্বতীর মন্দির হাওড়াতেই আছে। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী শ্রীরাম চন্দ্রের ভক্ত ছিলেন। তিনিই বিদ্যার দেবীকে রামের মাথায় বসিয়েছিলেন। প্রায় তিনশো বছর আগে অযোধ্যারাম ওপার বাংলার রাজশাহী থেকে হাওড়ায় আসেন। তৎকালীন বাংলা নবাব তাঁকে ‘চৌধুরী’ উপাধি দেন।

তিনি গঙ্গাস্নানে গিয়ে একদিন জলে ডুব দিয়ে উঠে দেখেন জলে গোঁফধারী রামের প্রতিবিম্ব। অনেকে বলেন ‘স্বপ্নাদেশ’। তিনি ফিরে বাড়ির সকলকে বলেন ও মন্দির বানানোর বিষয়ে আগ্রহী হন। তারপরই ভারতবর্ষে গোঁফধারী রাজকীয় রামের উদ্ভব। এর আগে তৎকালীন হাওড়ার গ্রামবাসীরা দেবী সরস্বতীর পুজো করতেন। হঠাৎ করে রামের পুজো, তাই তারা জমিদারের বিরোধিতা শুরু করেছিলেন। অবশেষে মীমাংসা হয়ে ঠিক হয়, দেবীর অবস্থান হবে রাম সীতার উপরে।

জানা যায়, এরপর থেকে প্রতিবছর সরস্বতী পুজোর দিন রামরাজাতলায় রামের মূর্তি নির্মাণের সূচনা হয়। প্রারম্ভিক পুজোর মধ্য দিয়ে বাঁশ কাটা শুরু হয়। সরস্বতী পুজোর দিন ষষ্ঠীতলার নির্দিষ্ট বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটা হয়। কুমারটুলির গৌরী পালের বংশধররা রামরাজাতলা বাজারের আটচালাতে আজও রাম-সীতার মূর্তি নির্মাণ করে চলেছেন। প্রথমে তিন দিন, তারপর পনেরো দিন, তারপর এক মাস, এখন চার মাস। আগে যাত্রা পালাগানের আসর বসত। বিশাল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে চৈত্র বা বৈশাখ মাসে রামনবমী তিথিতে শুরু হয়ে শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার পর্যন্ত রাম পুজো চলে।

গোঁফওয়ালা রাজকীয় রাম ও সীতার মূর্তি এখানে পূজিত হয়। সঙ্গে আছেন মহাদেব, ব্রহ্মা মোট ২৬ টি প্রতিমা। অবশ্যই রামসীতার মাথার উপরের দিকে অবস্থান করছেন পাঁচটি সরস্বতী। এছাড়া আছেন জয়া ও বিজয়া। সবার উপরে বসুদেব। রামের দুইপাশে লক্ষণ, ভরত, শত্রুঘ্ন ,বিভীষণ, হনুমান, জাম্বুবান, শিবের অনুচর নন্দী-ভৃঙ্গি। রামের মূর্তি ডান দিকে মহাবীর হনুমানের মূর্তি, বামদিকে সাবিত্রী-সত্যবান এবং বিষ্ণুর বামন অবতারের মূর্তি।