পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : বুধবারের সন্ধ্যা। আর পাঁচটা সন্ধ্যার মতোই সেদিনও আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তিলোত্তমা নগরী। অফিস ফেরত মানুষের ভিড়। ব্যস্ত নগরীর রাজপথে দাঁড়িয়ে কর্তব্যে অবিচল তরুণ সার্জেন্ট। এক্সাইড মোড়ে কোলকাতা পুলিশের সাউথ ট্রাফিক গার্ডের কর্তব্যরত তরুণ সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষের কাছে হঠাৎই উদ্ভ্রান্তের মতো এক প্রবীণ ব্যক্তির আবির্ভাব। চোখে-মুখে বিষন্নতার ছাপ, মনে হারানোর ব্যাথা।
প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়েই প্রবীণ জানালেন, হাওড়া থেকে তিনি বাসে উঠেছিলেন। কিন্তু, এক্সাইড মোড়ে নামার সময় ভুলবশত নিজের হাতে থাকা ব্যাগটি বাসেই ফেলে এসেছেন। ব্যাগে বিভিন্ন নথির পাশাপাশি ছিল অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। যা হারালে হয়ত চাকরিটাই চলে যাবে।
সমস্ত বিষয়টি দ্রুত বুঝতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন দীপ্তিময় ঘোষ। ওই ব্যক্তিকে সাউথ ট্রাফিক গার্ডে নিয়ে যান দীপ্তিময়। চা-জল খাইয়ে কিছুটা ধাতস্থ করে তাঁর কাছে বাসের টিকিট দেখতে চান। টিকিট থেকে পাওয়া যায় বাসের রুট ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর। খবর দেওয়া হয় ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে। স্রেফ কন্ট্রোল রুমে খবর দিয়েই অবশ্য ক্ষান্ত হননি দীপ্তিময়। মোবাইল অ্যাপে বাস মালিকের খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু, মোটর ভেহিকেলসে নথিভুক্ত নম্বরে ফোন করে দেখা যায় তার কোন অস্তিত্বই নেই। তারপরও হাল ছাড়েননি এই তরুণ সার্জেন্ট।
তিনি এবার অন্য পথ ধরেন। ট্রাফিক গার্ডের কম্পিউটার সেকশন থেকে শুরু হয় পুরনো কেস ডিটেলসের খোঁজ। সেখান থেকে বিভিন্ন কন্ডাক্টরদের ফোন নম্বরের খোঁজ মেলে। একের পর এক ফোন করে অবশেষে একটিতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। আর সেই সূত্র ধরেই মেলে বাসটির বর্তমান ড্রাইভারের ফোন নম্বর। যোগাযোগ করা হয় ড্রাইভারের সঙ্গে। তিনি সাউথ ট্রাফিক গার্ডে এসে ব্যাগটি দিয়ে যান। উদ্ধার হওয়া সেই ব্যাগে ছিল নগদ বেশ কয়েক হাজার টাকা, পরিচয়পত্র সহ কয়েকটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। মনে মনে হয়ত ব্যাগ ফিরে পাওয়ার আসা ছেড়েই দিয়েছিলেন ব্যাগের মালিক।
কিন্তু, সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষ ও তাঁর সহযোগীদের নিরলস প্রচেষ্টায় কার্যত অভাবনীয় ভাবে নিজের হারানো ব্যাগ ফিরে পেয়ে তিনি রীতিমতো উচ্ছসিত। শুধু ব্যাগের মালিক নন, ইতিমধ্যেই কোলকাতা পুলিশের তরফেও প্রশংসিত হয়েছে দীপ্তিময়ের কর্মকান্ড।
ইতিমধ্যেই কোলকাতা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করা হয়েছে। আর তার মাধ্যমেই অসংখ্য মানুষকে এই তরুণ সার্জেন্টকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, কোলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষ পেশার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে সমাজসেবায় যুক্ত। চাকরির ফাঁকে কখনো তিনি পৌঁছে যান সুন্দরবনের আম্ফান বিধ্বস্ত মানুষের মাঝে, আবার কখনো তিনি পাখি ও বন্যপ্রাণ বাঁচানোর ডাক দিয়ে হাজির হন প্রত্যন্ত গ্রামের বুকে। এভাবেই প্রকৃত ‘সমাজবন্ধু’ হয়ে উঠেছেন সার্জেন্ট দীপ্তিময় ঘোষ।