নিজস্ব সংবাদদাতা : রূপনারায়ণের ধারে ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রাম থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ওঁরা। সেই স্বপ্নটা ছিল মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, স্বপ্নটা ছিল চিকিৎসক হয়ে দীনদরিদ্র মানুষের সেবা করা — সেই স্বপ্নের সোপানে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হলেন শ্যামপুরের দু’ই যমজ ভাই। গ্রামীণ হাওড়ার শ্যামপুর-২ ব্লকের রূপনারায়ণ লাগোয়া সাঁইবেড়িয়া গ্রামের যমজ দু’ই ভাই আকাশ হাতি ও বিকাশ হাতি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হলেন। আকাশ ও বিকাশ দু’জনেই ছোটো থেকেই ভীষণ মেধাবী। ছোটো থেকেই অভাবের সংসারে বড়ো হয়ে ওঠা। বাবা রামকৃষ্ণ হাতি মাছ ধরার ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। অন্যের অধীনে কাজ করে যা মেলে তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে। ছোটো থেকেই আকাশ ও বিকাশ ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। ২০২১ সালে শ্যামপুর হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পর বাড়িতেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বড়ো কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলেনি। তাই বাড়িতেই চলত কঠোর অধ্যাবসায়। গাইড হিসাবে ওরা পাশে পেয়েছিল শিক্ষক তুহিন পাত্রকে। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…
একবছরের লাগাতার পরিশ্রম, অদম্য আর মেধাই এনেদিল সাফল্য। বুধবার ডাক্তারির সর্বভারতীয় পরীক্ষা নিটের রেজাল্ট প্রকাশ হলে দেখা যায় আকাশ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ২৫৮৫ র্যাঙ্ক করেছে (৭২০ এর মধ্যে ৬৬১ পেয়েছে)। বিকাশের সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ৭৯৭৪(৭২০ এর মধ্যে ৬৩৫ পেয়েছে)। আকাশ হাতির কথায়,”ছোটো থেকেই অভাবের সংসারে বড়ো হয়ে ওঠা। আমাদের এই লড়াইয়ে আমরা তুহিন স্যারকে ভীষণভাবে পাশে পেয়েছি। তিনি আমাদের বিভিন্নভাবে গাইড করার পাশাপাশি বিভিন্ন বই, স্টাডি মেটেরিয়াল দিয়ে বছরভর সাহায্য করেছেন। তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।” আকাশ ও বিকাশ দু’জনেই জানিয়েছেন, আপাতত তাদের লক্ষ্য সফলভাবে এমবিবিএস পাশ করা। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা চিন্তা-ভাবনা করবেন। সন্তানদের এহেন সাফল্যে ভীষণভাবে উচ্ছসিত পরিবার। মা উমা হাতির কথায়, ছোটো থেকেই ওদের মধ্যে ভীষণ জেদ আর পড়াশোনার প্রতি একাগ্রতা ছিল। তা দিয়েই ওরা সাফল্যের সোপানে উত্তীর্ণ হয়েছে। গ্রামের ছেলেদের এহেন সাফল্যে খুশি স্থানীয়রাও। স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নরেশ দোলুইয়ের কথায়, আকাশ-বিকাশ দেখিয়ে দিল আমাদের গ্রামের ছেলেরাও পারে। ওদের গর্বে সমগ্র গ্রাম গর্বিত।