উলুবেড়িয়ায় দেখা গেল সম্প্রীতির শেষকৃত্য

নিজস্ব সংবাদদাতা : উলুবেড়িয়া পুরসভার ২২ নং ওয়ার্ডের সিজবেড়িয়ার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ পাল(৬২)। দীর্ঘদিন ধরেই ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার রাত ১০ টা নাগাদ হঠাৎ করেই মারা যান। রবীন্দ্রনাথ বাবুর এক ছেলে। পরিবারের তেমন লোকবল না থাকায় তারা শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে সমস্যায় পড়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পালের বাড়িটি সংখ্যালঘু এলাকায় হ‌ওয়ার কারনে বিপদের সময় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসেন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

তারা উলুবেড়িয়ার নতীবপুর শ্মশান, নাকু বাবুর শ্মশান সহ একাধিক শ্মশানে গেলেও করোনার আতঙ্কে দাহ করতে রাজি হননি কোনো ডোম। অবশেষে তারা নিজেরাই রবীন্দ্রনাথ পালের শেষকৃত্য করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই মতো রবিবার সকালে তারাই সমস্ত জিনিসপত্র জোগাড় করে মৃতদেহ নিয়ে যান উলুবেড়িয়ার শতমুখী শ্মশানে। সেখানেই হিন্দু সম্প্রদায়ের রীতি নীতি মেনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শেষকৃত্য সম্পন্ন হ‌ওয়া পর্যন্ত একঠায় সেখানে উপস্থিত র‌ইলেন এই মানুষগুলো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এহেন নিদর্শনে খুশি এলাকার মানুষ।

তারা এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা সেখ সফিকুল ইসলাম বলেন উনি দীর্ঘদিন আমাদের পাড়ার বাসিন্দা। আমাদের আপদে বিপদে সমস্ত অনুষ্ঠানে আমাদের পাশে থাকেন। তিনি আমাদের পরিবারের সদস্য। করোনার আবহে কেউ দাহ করতে এগিয়ে আসেনি। ওনাদের লোকবল‌ও তেমন নেই। তাই আমরা এগিয়ে এসেছি। তিনি আরো বলেন উনি যে সম্প্রদায়ের হোক না কেন আমাদের প্রতিবেশী। আমাদের দায়িত্ব বিপদের সময় পাশে থাকা, তাই আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। আর এক প্রতিবেশী সেখ ইউনিস আলি বলেন উনি আমাদের প্রতিবেশী। উনি শনিবার রাতে মারা যান।

লোকবল না থাকায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে আমরাই ওনার শেষকৃত্য করবো। সেই মতো আমরা শ্বশানে নিয়ে এসেছি দাহ করার জন্য। উলুবেড়িয়া পুরসভার ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাশ্বতী সাঁতরা বলেন এই এলাকায় একটিই মাত্র হিন্দু পরিবার রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ পাল মারা যাওয়ার পর এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এগিয়ে এসেছেন শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে। করোনার আতঙ্কে কোন শ্মশান মৃতদেহ দাহ করতে রাজি হয়নি। আমার কাছে খবর আসার পরেই আমাদের ছেলেদের পাঠাই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ যে ভাবে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ালো, তাদের কুর্নিশ জানাই।