পাঁচলায় সামাজিক বয়কটের শিকার করোনা আক্রান্তের পরিবার ও আত্মীয়রা, খাদ্যরসদ শেষ, এগিয়ে এলেন স্বেচ্ছাসেবীরা

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Updated on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : লড়াইটা রোগীর সাথে নয়, রোগের সাথে —ফোনের কলারটিউনে বারবার এই সামাজিক বার্তা ভেসে এলেও বারবার সামাজিক বয়কট ও হেনস্থার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কখনো বিডিওকে ভাড়াবাড়িতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন তাঁরা ‘শিক্ষিত’ প্রতিবেশীরা, আবার কখনো ভিনরাজ্য থেকে আসা মা-ছেলেকে রাত কাটাতে হচ্ছে নির্জন শ্মশানে। পারস্পরিক দূরত্বের পরিবর্তে ‘সামাজিক’ ও ‘মানসিক’ দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে বারেবারে। আবারও এরকমই এক নির্মম ঘটনার সাক্ষী থাকল গ্রামীণ হাওড়ার পাঁচলার জয়নগরের এক পরিবার।

সূত্রের খবর, রাণীহাটি জয়নগর পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সুভাষ প্রামাণিকের বাবা, মা ও বোন করোনায় আক্রান্ত হয়ে উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি হন। সুভাষের তাঁর স্ত্রী ও এক পুত্র রয়েছে। হোম কোয়ারান্টাইনে থাকায় তাঁর বাড়ির দ্বারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছিলেন তারই আত্মীয় ও জ্ঞাতির লোকজন। অভিযোগ, আর তার জেরেই গ্রামের কিছু মানুষের দ্বারা কার্যত হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে সুভাষের আত্মীয়দের। এমনকি তার বাড়িতে এসেও বেশ কিছু মানুষ ঝামেলা করেছে বলে অভিযোগ সুভাষের। তাঁর অভিযোগ, “আমার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ায় আমার আত্মীয়দের উপর একপ্রকার ফতোয়া জারি করা হয়েছে। তারা পাড়ার কল ব্যবহার করতে পারবে না। পারবে না দোকানে যেতে।”

গ্রামের গুটিকয়েক যুবকের মদতেই এভাবে তাদের একঘরে রাখা হয়েছে বলে সুভাষ জানান। এমনকি তাঁর ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মৌসুমি প্রামাণিক ও পুত্র সংগ্রাম প্রামাণিককেও বিভিন্ন ভাবে সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি সুভাষের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে থাকা জ্ঞাতির অন্যান্যদেরও একঘরে রাখা হয়েছে। ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না পুকুর-টিউবওয়েল। আর এর জেরেই তাঁরা কাজে বেড়োতে পারছেন না। সুভাষ প্রামাণিকের পাশাপাশি তার জ্ঞাতির লোকজনেরও খাদ্য রসদ প্রায় শেষের পথে। নিরুপায় হয়ে গতকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ও তাঁর আত্মীয়দের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার আবেদন জানান সুভাষ।

সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশিষ্ট সমাজকর্মী রেজাউল করিমের নেতৃত্বে এগিয়ে এলেন একদল স্বেচ্ছাসেবী। তাঁরা সুভাষ বাবুর পরিবারের জন্য পৌঁছে দিলেন খাদ্যসামগ্রী। রেজাউল করিম জানান, “অত্যন্ত নিন্দনীয় এই ঘটনা। আমরা পাঁচলা থানায় বিষয়টি জানিয়েছি। গুটিকয়েক স্থানীয়ের মদতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আজ সুভাষ প্রামাণিকের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তাঁর জ্ঞাতিদের দ্বারেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।” রেজাউল বাবুর আরও অভিযোগ, “স্থানীয় আশাকর্মীকেও বিভিন্নভাবে হেনস্থা ও গালিগালাজ করা হচ্ছে।” আর কবে সচেতন হবে মানুষ —তা নিয়েই বারবার প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা।