পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : দীর্ঘ লকডাউনের জেরে বহু মানুষই কর্মহীন হয়েছেন। বহু দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের আর্থিক অবস্থা কার্যত বেহাল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের সোনামুই কাদম্বিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। জানা গেছে, এবার এই বিদ্যালয় থেকে মোট ৭২ জন ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।
তাদের থেকে কোনো পরীক্ষা ফিজ না নিয়ে বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষিকা ও করণিকরা চাঁদা দিয়ে ৭২ জন পরীক্ষার্থীর ফিজ বাবদ মোট ১৪৪০০ টাকা মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতেই অবশ্য থেমে থাকেননি তাঁরা। সোনামুই গ্রামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী অব্ধি মোট ৩২৩ জন ছাত্রীর পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির জন্য কোনো অর্থ লাগবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবারই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বন্দনা পাঁজা সহ-শিক্ষিকা ও করণিকদের সাথে সভায় বসেছিলেন। সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই তা নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি আকারে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বন্দনা পাঁজা জানান, “অতিমারীর এই পরিস্থিতিতে ছাত্রীদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে আমরা বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথমত, এবার আমাদের বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দিতে চলা ৭৩ জন ছাত্রীর কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হবে না। বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও করণিকরা নিজেরা চাঁদা দিয়ে ছাত্রীদের পরীক্ষার ফিজের টাকা বোর্ডে দ্রুত পাঠিয়ে দেবে।”
এর পাশাপাশি তিনি জানান, “প্রতিবছরই নতুন শ্রেণীতে ভর্তির সময় স্কুল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের জন্য ছাত্রীদের থেকে একটা নূন্যতম ফিজ নেওয়া হয়। কিন্তু এবার সেটাও নেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে স্কুল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে বেশ কিছুটা অর্থ ঘাটতি থাকবে। আমরা তথা শিক্ষিকা ও করণিকরাই চাঁদা দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করে দেব বলে ঠিক হয়েছে।”
বর্তমানে সোনামুই কাদম্বিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও করণিকের সংখ্যা ১৯। সকলে মিলেই এই উদ্যোগে সামিলবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মধুশ্রী কুমার, মৌমিতা পাল সাউরা জানান, সার্বিক অবস্থার কথা চিন্তাভাবনা করেই পড়ুয়াদের স্বার্থে তাঁরা এই সমবেত পদক্ষেপ নিয়েছেন। শিক্ষিকাদের এহেন মানবিক উদ্যোগকে অভিভাবক থেকে ছাত্রী সকলেই একবাক্যে স্বাগত জানিয়েছেন।