নিজস্ব প্রতিবেদক : সময়টা বিংশ শতকের তিনের দশক। সারা ভারত যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ ক্রমশ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
একদিকে সুভাষ চন্দ্র বসু; অন্যদিকে মাহাত্মা গান্ধীর গোষ্ঠীর মধ্যে ‘অঘোষিত’ দ্বন্দ্ব। যদিও কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীদের সমর্থনে মহাত্মা গান্ধীর স্নেহধন্য পট্টভি সিতারামাইয়াকে পরাজিত করে কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আপামর ভারতবাসীর নয়নের মণি ভারতের যুব সমাজের স্বপ্নদ্রষ্টা সুভাষচন্দ্র বসু।
কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে কংগ্রেসের নরমপন্থী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব ক্রমাগত চলতে থাকায় সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস ত্যাগ করে গঠন করলেন ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’। সুভাষচন্দ্র বসুর ত্যাগ ও আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলার অগণিত মানুষ বিশেষত যুব সম্প্রদায় ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে স্বাধীনতার অঙ্গনে নামল।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বাংলার ছাত্র-যুবকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করতে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১ লা মে পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাত্রাপথে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ছাত্র-যুব ও উলুবেড়িয়ার অন্যতম নেতা নানু ঘোষের প্রচেষ্টায় নেতাজীকে গণ সম্বর্ধনায় সম্বর্ধিত করা হয়। এরমাত্র ৩ দিন পরেই সুভাষচন্দ্র বসু পা রাখেন উলুবেড়িয়ার মাটিতে। সভা করেন গরুহাটার মাঠে।
তারপর দিন অর্থাৎ ১৯৪০ সালের ৫ ই মে ভারতের আবালবৃদ্ধবনিতার নয়নের মণি, কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নদ্রষ্টা, ভারতের স্বাধীনতার মুক্তিসূর্য সুভাষচন্দ্র বসুর পাদস্পর্শে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বাগনান। বাগনানের চিত্রবাণী সিনেমাহলের পশ্চিমে পানআড়তের ময়দানে অগণিত স্বাধীনচেতা মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করেন,”Country men prepare for struggle”।
নেতাজীর বাগনান ও উলুবেড়িয়ার এই সভার খবরে মুখরিত হয়ে ওঠে হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডস ও আনন্দবাজার পত্রিকা। নেতাজীর মিটিংয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘Hindustan Standard’-এ ( ৪ ঠা মে, ১৯৪০) বলা হয়:— “Public meeting at Bagnan place – Maidan by th side of Bagnan Station
Date & Time-Sunday,the5th May at 5-30 P.M.
President-Sj Subhas Chandra Bose.
Loud speakers and special arrangement for ladies will be made in both metings.”
3.5.40। আবার সভার পরের দিন হেডলাইনে উদ্ভাসিত হয়ে নেতাজীর সভার খবর। ঐ কাগজেই ৬.৫.৪০ তারিখে লেখা হয়েছে,”The public reception at Bagnan was held under the auspices of the Juva Sangha and the Congress Comittee.”।
জানা যায়, এর মাঝেই আবার সুভাষচন্দ্র বসু উলুবেড়িয়া না বাগনান প্রথম কোথায় আসবেন তা নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে প্রবল বিরোধের সৃষ্টি হয়। যদিও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব নানু ঘোষের প্রভাবে নেতাজী প্রথমে উলুবেড়িয়া ও তারপর দিন বাগনানে সভা করেন বলে জানা যায়।