নিজস্ব সংবাদদাতা : ট্রেন লাইনে মাথা রেখে আত্মঘাতী প্রেমিক যুগল। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ৯টা নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া খড়্গপুর শাখার উলুবেড়িয়া ও ফুলেশ্বর স্টেশনের মাঝে। কিশোরের নাম রূপম বানু(১৭) ও কিশোরীর নাম স্নিগ্ধা কারক(১৭)। উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানা এলাকার চক ভগবতীপুর বাসিন্দা রূপম বাগনানের আনন্দনিকেতন বিদ্যামন্দিরের দ্বাদশ শ্রেণীর বিঞ্জান বিভাগের ছাত্র। উলুবেড়িয়ার চকবৃন্দাবনপুরের বাসিন্দা স্নিগ্ধা ও বাগনানের আনন্দনিকেতন বিদ্যামন্দিরের দ্বাদশ শ্রেণীর কলা বিভাগের ছাত্রী। তাদের দুজনের মধ্যে বেশকিছুদিন আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বুধবার রাতে তারা আত্মঘাতী হলেও, তাদের কোনো পরিচয় জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার তাদের পরিচয় জানা যায়। রেল পুলিশ সুত্রে জানা গেছে বুধবার রাত ৮.৫০ নাগাদ আপ পাঁশকুড়া লোকালের গার্ড বিষয়টি উলুবেড়িয়া স্টেশন কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে আপ মেছেদা লোকালের চালক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ঘটনায় কিশোরের মাথা গলা থেকে কেটে বাদ চলে যায় ও কিশোরীর মাথা পিষে যায়।
মৃতদেহের কাজ পড়ে থাকা ব্যাগের মধ্যে থাকা নথি থেকে রূপমের পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। পরে বৃহস্পতিবার বেলায় জানা যায় স্নিগ্ধার পরিচয়। স্নিগ্ধার পরিবার সুত্রে জানা গেছে রূপম ও স্নিগ্ধা সহপাঠী হওয়ার পাশাপাশি একে অপরের বন্ধু ছিল। স্নিগ্ধার বন্ধু হিসাবে রূপমের যাতায়াত ছিল তার বাড়িতে। বুধবার দুপুরে রূপম স্নিগ্ধার বাড়িতে আসে। পড়াশোনার কিছু নোটস দেয়। সন্ধা সাড়ে ছটা নাগাদ রূপম সেখান থেকে বেরোনোর সময় স্নিগ্ধা তাকে সাইকেলে চেপে এগিয়ে দেওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এরপরে আর স্নিগ্ধা বাড়ি ফেরেনি। রাত বাড়তে থাকায় বাড়ির মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় চিন্তিত পরিবারের লোকজন তার খোঁজ শুরু করে। রাত আটটা নাগাদ স্নিগ্ধা বাড়িতে ফোন করে জানায় সে এবং রূপম বিয়ে করেছে। তারপর স্নিগ্ধা তার সিঁদুর পড়া ছবি তার এক আত্মীয়কে পাঠায় এবং সেই ছবিটি রূপম সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। স্নিগ্ধার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল একমাত্র মেয়ের এই খবর শুনে সমানে কেঁদে চলেছেন তার মা টুটুন কারক। স্নিগ্ধার কাকিমা সুস্মিতা কারক বলেন স্নিগ্ধা বিয়ের কথা জানালে আমরা তাকে বাড়ি ফিরে আসতে বলি।
কিন্তু সে জানায় আজ বাড়ি ফিরবেনা। তার পরেই ফোন কেটে যায়। তারপর বহুবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। সকালে এক আত্মীয় মারফত আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারি। স্নিগ্ধার কাকা বিভাস কারক মৃতদেহ সনাক্ত করার পর বলেন বাবা মায়ের এক মেয়ে স্নিগ্ধা। বাবার মানসিক সমস্যা রয়েছে। সে বাগনানের মামারবাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতো। সাত আট মাস আগে থেকে বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিল। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল?কিছুই বুঝতে পারছিনা। রূপমের বাড়িতে গিয়ে জানা গেল তার বাবা অসিত বনুর বাড়ির সাথেই একটি মুদিখানা দোকান রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার কাজে হাত লাগাতো রূপম। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী রূপম চারটি বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় দারুন ফল করেছিল। এলাকায় ভালো ছেলে হিসাবে পরিচিত রূপম যে এমন সিদ্ধান্ত নেবে তা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেননা তার পাড়া পড়শীরা। রূপমের মামা শক্তি সামন্ত বলেন। রূপমরা তিন বোন ও এক ভাই। বাবার মুদিখানার দোকান রয়েছে। যথেষ্ট আর্থিক সংগতি রয়েছে। ওরা বিয়ে করে সংসার করতে চাইলে, কেউই আপত্তি করতোনা। কেন যে এই পথ বেছে নিলো? জানিনা। মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর পাশাপাশি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ।