সীমান্তবর্তী ব্লককে করোনামুক্ত রাখতে রাতদিন লড়াইয়ে নেমেছেন গ্রামীণ হাওড়ার যুবক

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : মালদহ জেলার হবিবপুর ব্লক। ভারত – বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই প্রত্যন্ত ব্লকে এখনো খুব বেশি শিক্ষার আলো জ্বলেনি। মূলত, আদিবাসী সহ বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার মালদহ জেলাকে ‘রেডজোন’ হিসাবে ঘোষণা করলেও করোনার আবহে অনেকটাই স্বস্তির হাওয়া এই ব্লকজুড়ে। কারণ সীমান্তবর্তী এই ব্লকের মানুষ অনেক বেশি সচেতন। আর এই সচেতনতার নেপথ্যে রয়েছেন গ্রামীণ হাওড়ারই এক যুবক। লকডাউনের আগে থেকেই এভাবেই ব্লকের মানুষকে করোনার হাত থেকে মুক্ত রাখতে দিনরাত লড়াই জারি রেখেছেন হবিবপুর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শুভজিৎ জানা। শুভজিৎ গ্রামীণ হাওড়ার বাগনান-১ ব্লকের ভূঁয়েড়া গ্রামের বাসিন্দা। সেখানেই বেড়ে ওঠা।

তারপর কর্মসূত্রে প্রথম পোস্টিং এই ব্লকেই। করোনা নিয়ে সতর্ক করতে অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন বাগনানের এই ভূমিপুত্র। কখনো মাইক নিয়ে প্রচারে বেড়িয়েছেন,বা পৌঁছে গেছেন ভিড় বাজারে কিমবা রেশন দোকানে। সেখানে গিয়ে ভিড়ের পরিণাম কী হতে পারে তা সম্পর্কে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে বুঝিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন। ব্লককে আগলে রাখতে আবার কখনও মধ্যরাতে পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাকা চেকিংয়ে নেমেছেন। অসহায়ের সহায় হয়ে এগিয়ে গেছেন অনাথ শিশু কিমবা বৃদ্ধা মায়ের পাশে। বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার মুক্ত হাত।

মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান করার পাশাপাশি লকডাউনে কাজ হারিয়ে বেকার হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবিবপুর ব্লকের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ব্যক্তিগত স্তরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের লড়াইয়ে প্রাণশক্তি জুগিয়েছেন স্বভাবে নরম কর্মে অটুট এই তরুণ প্রশাসক। রেশন নিয়ে রাজ্যজুড়ে যখন মানুষের অভিযোগের শেষ নেই তখন উপভোক্তারা যাতে সঠিক রেশন পান তারজন্য ঘুরে বেড়িয়েছেন কখনো বুলবুলচন্ডি আবার কখনো শ্রীরামপুর বা বৈদ্যপুর গ্রামে। রেশন দোকানের ভিড় লাইনকে সুরক্ষিত করতে নিজে হাতে কেটেছেন সুরক্ষারেখা। মাস্কহীন ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছেন মাস্ক।

এতেই থেমে থাকেননি এই ডব্লু.বি.সি.এস অফিসার। কখনো এগিয়ে গেছেন অসহায় রোগীর পরিবারের পাশে আবার কখনো বা অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিশুর দুধ কিনে দেওয়ার মাধ্যমে। শত ব্যস্ততার মাঝেও ভোলেননি জন্মভূমির কথা। আমতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্য দিয়ে নিজের গ্রামের বহু মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ভূঁয়েড়া গ্রামের এই কৃতি সন্তান। শুভজিৎ জানার কথায়, “মানুষ মানুষের জন্য। তাই এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা অত্যন্ত প্রয়োজন।” ছোটো থেকেই চোখে স্বপ্ন ছিল বড়ো আমলা হওয়ার। কলেজ জীবনের গন্ডী অতিক্রম করেই শুরু লক্ষ্যে পৌঁছানোর লড়াই। কোলকাতা হাইকোর্টের কর্মচারী হিসাবে কর্মজীবন শুরু। তারপর ডব্ল.বি.সি.এস পরীক্ষায় পাশ করে মালদহের এই প্রত্যন্ত ব্লকে শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক রূপে যোগদান। আর এভাবেই দুঃসময়ে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে বসবাসকারী মানুষের অনাগত ভবিষ্যতের কালো মেঘঢাকা মুখে হাসি ফোটানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামীণ হাওড়ার এই তরুণ যোদ্ধা।