পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : বাংলার প্রাণের পুজো দুর্গোৎসব হলেও ওঁরা সারা বছর ধরে অন্য এক দেবীর ধরাধামে আগমনের অপেক্ষা করেন। মা সমীচন্ডী ঘরে এলে আনন্দে মেতে ওঠে বাড়ুই সম্প্রদায়ের মানুষ। বহু বছর ধরে এটাই গ্রামের রীতি। গ্রামীণ হাওড়ার আমতা-১ ব্লকের সোনামুই গ্রামের বাড়ুই সম্প্রদায়ের আরাধ্যা দেবী সমীচন্ডী। প্রতি বছরের মতো বার্ষিক পুজোকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার দেবীর উপাসনায় মেতে উঠেছে গ্রাম।
জানা যায়, বাড়ুই সম্প্রদায়ের মানুষ পান চাষের সাথে যুক্ত ছিলেন। কালের নিয়মে সেই পেশা থেকে বহু মানুষ অন্য পেশায় চলে গেলেও আজও সমহিমায় গ্রামের কুন্ডুপাড়ায় দেবী পূজিত হন। প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো বলে জানা যায়। প্রথমে বৈশাখ মাসে দেবীর পুজো হলেও, কালবৈশাখীর কারণে তা পরিবর্তিত হয়ে তা শীতকালে অনুষ্ঠিত হয়। মূলত, নবমী তিথিতেই দেবীর পুজো হয়।
কথিত আছে, দেবী সমীচন্ডীর আরাধনার কারণে গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো হতনা। সমীচন্ডী পুজোকে কেন্দ্র করে বসত ‘নৌবৎ’-এর আসর। উল্লেখ্য, নৌবৎ সঙ্গীতেরই এক অঙ্গ। বাঁশ, নারিকেল ,তাল গাছের উচ্চতায় ভাড়া বেঁধে ৫/৬ টি বাদক সানাই জাতীয় বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করতেন। সাথে কোলকাতার নামীদামী যাত্রাদলের পালায় মুখরিত হয়ে উঠত পুজোপ্রাঙ্গণ।
কালের নিয়মে সে সবে ভাটা পরলেও আজও দেবী পূজিত হন সোনামুই গ্রামের মানুষের মধ্যে। দেবীর মূর্তির মধ্যেও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। চক্র, শঙ্খ এবং দুই মুদ্রা দেবীর চার হাতকে অলংকৃত করে রাখে। দেবীর ডান দিকে লক্ষী ও বাম দিকে সরস্বতী। এছাড়াও দুই পরী ও দুই ঋষি এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। নৌবতের সুরমাধূর্যে শুভ সূচনা হতো সমিচন্ডী পুজোর।
কলকাতার অপেরা ও স্থানীয় যাত্রাদলের মেলবন্ধনে পূজা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠতো মুখরিত। উদ্যোক্তারা জানান, গণেশ অপেরা, ভারতী অপেরা, আর্য অপেরার মতো ভারত বিখ্যাত দলের পদার্পণ ঘটেছে এই গ্রামের মাটিতে। কালের প্রবাহের সাথে পুজোর উদ্যোগে ভাটা পড়লেও ঐতিহ্যের ধারায় আজও মনুষ্য হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার আনে মা সমীচন্ডী।