‘চিরসত্য’ — বিশ্ববরেণ্য বাঙালি স্রষ্টার জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

By নিজস্ব সংবাদদাতা

Published on:

নিজস্ব সংবাদদাতা : “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।” শৈশবেই তিনি হয়তো বিশ্বকবির এই কয়েকটি লাইন নিজের অজান্তেই অন্তরের গহীনে গভীরভাবে ধারণ করেছিলেন। তাই স্বদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই অপু-দূর্গা, তপসে, গুপী-বাঘা, ফেলুদা, শঙ্কু কিমবা ভুতের রাজার মতো অসংখ্য কালজয়ী সৃষ্টিকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্ববাসীর দরবারে। শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর স্নেহাশিসকে পাথেয় করে যে পথচলার সূচনা ঘটেছিল সেই পথ ধরেই স্রষ্টার ঝুলি থেকে প্রথমেই উৎসারিত হয়েছিল ‘পথের পাঁচালী’-র মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র। তারপর ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’, ‘মণিহারা’, ‘তিনকন্যা’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘সোনারকেল্লা’, ‘চারুলতা’ সহ প্রায় ৩৬ টি চিত্রের মধ্য দিয়ে বিশ্বচলচ্চিত্রের সম্ভারকে সুসমৃদ্ধ করেছেন। ‘সতরঞ্জ কি খিলাড়ি’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘আগন্তুক’, ‘হীরক রাজার দেশে’ এই সমস্ত সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি আজও দর্শকমনে সমুজ্জ্বল। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…

আট থেকে আশি সকল মানুষের জন্য ঝুলিতে রেখে গেছেন বিভিন্ন স্বাদের বহু অসামান্য বিস্ময়কর কীর্তি। কখনো শাপলা পাতার ওপর ফড়িঙের খেয়ালি নৃত্য, বা জল-পতঙ্গের ছন্দবদ্ধ গতি, আকাশ ভাঙা বৃষ্টি কিমবা বর্ষণসিক্ত রাত্রিশেষে ভাঙা রান্না ঘরে চিৎ হয়ে থাকা মরা ব্যাঙ এভাবেই নিজের অনন্যসৃষ্টিকে তুলে ধরেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রে। মানুষের জীবনের নানা দিক চলচ্চিত্রের ক্যামেরায় অঙ্কন করেছেন সহজ সরল বর্ণিল রঙে। সেলুলয়েডে গল্পের সাথে অদ্ভুতভাবে আবেগ, অনুভূতি, কাব্যময়তা, বাস্তবানুগতা ও মানবিকতার সমাবেশ ঘটিয়েছেন। জীবনকে দেখেছেন খুব গভীর দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাই তাঁর সৃষ্ট ছবিগুলিতে দেখা যায় অজস্র গল্পের ভাঙা-গড়া। সৃষ্টিতে ছিল তাঁর বিস্ময়। তুলির মতোই ব্যবহার করেছেন ক্যামেরা। সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে এভাবেই তিনি কলমের মধ্য দিয়ে কখনো ফুল ফুটিয়েছেন আবার কখনো বা তুলির স্পর্শে বিমূর্তকে মূর্তে রূপান্তরিত করেছেন। এভাবেই শতাব্দীর পর শতাব্দী গড়িয়ে যাবে কিন্তু অমর কালজয়ী সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সত্যজিৎ রায় থেকে যাবেন ‘মৃত্যুজিৎ’ হয়েই।

তাইতো বিশ্ববরেণ্য জাপানি চলচ্চিত্রকার ‘রশোমন’ খ্যাত আকিরা কুরোসাওয়ার সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতিটি আজও বড়োই প্রাসঙ্গিক—

“এই পৃথিবীতে বাস করে সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র না দেখা চন্দ্র-সূর্য না দেখার মতোই অদ্ভুত ঘটনা।”