নিজস্ব প্রতিবেদন : সময়টা উনিশ শতক। গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব৷ ডাক পড়ল তৎকালীন বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক তথা প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানসাধক মহেন্দ্রলাল সরকারের। মহেন্দ্রলালের জন্ম ১৮৩৩ সালের ২ রা নভেম্বর।তিনি গ্রামীণ হাওড়ার মুন্সিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নাম তারকনাথ সরকার। তিনি মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবা ও ৮ বছর বয়সে মা’কে হারান। বাবার মৃত্যুর পর মহেন্দ্রলাল সরকারকে তাঁর মা কোলকাতার নেবুতলায় মাতুলালয়ে নিয়ে চলে যান এবং সেখানেই মহেন্দ্রলালের বেড়ে ওঠা। বাংলা শিক্ষার জন্য তিনি গিয়েছিলেন ‘গুরুমশাই’ এর কাছে। আর এক গুরু ঠাকুরদাস দে তাকে ইংরেজি ভাষাটা শেখান।
ইংরেজিতে জ্ঞান লাভ করার সুবাদেই তিনি ১৮৪০ সালে কোলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৪৯ সালে তিনি জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তখন হিন্দু কলেজে বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ না থাকায় তাঁকে মেডিসিন নিয়ে পড়ার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে যেতে হয়। মেডিকেল কলেজে পাঠরত অবস্থায় তাঁর জ্ঞানের উৎকর্ষতা এতোটাই প্রতিভাত হয়েছিল যে তাঁকে দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের একাধিক বক্তৃতা দিতে আহ্বান করেছিলেন বিভাগীয় অধ্যাপকরা। কলেজ জীবনে তিনি অনেক কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন এবং ১৮৬০ সালে মেডিসিন, শল্যচিকিৎসা ও Midwifery তে অনার্স সহ চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ১৮৬৩ সালে তিনি এমডি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।
তিনি এবং জগৎবন্ধু বসু ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এমডি চন্দ্রকুমার দে মহাশয়ের পরে। মহেন্দ্রলাল সরকারের পরামর্শেউ সরকারি বিবাহবিধি প্রণয়নে মেয়েদের বিবাহের বয়স ন্যূনতম ১৬ বছর নির্ধারণ করেছিলেন। ১৮৮৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেছিলেন। এই সম্মেলনে অসমের চা শ্রমিকদের দুরবস্থা সম্বন্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। মহেন্দ্রলাল শ্রমিকদের অপমানসূচক ‘কুলি’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি করেন। তিনি কলকাতার শেরিফ (১৮৮৭) এবং বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। রামকৃষ্ণ কথামৃতের পাতায় পাতায় মহেন্দ্রলালের কাহিনী রয়েছে। তাঁর নামে স্টেশনেরও নামকরণ হয়েছে।