পৃথ্বীশরাজ কুন্তী : পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ঝালদা-১ ব্লকের ছাতাটাঁড় পাঁড়রী। গ্রামের পাশেই রয়েছে একাধিক পাহাড়, রয়েছে খয়ড়্যাবেড়া ড্যাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত এই প্রত্যন্ত গ্রামেই বাস সুদীপ সিং মুড়ার। পাহাড়ি গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠায় খুব ছোটো থেকেই পাহাড়ের সাথে সুদীপের সখ্যতার বন্ধন গড়ে ওঠে। বয়স বাড়ার সাথে সেই বন্ধন আত্মিক বন্ধনে রূপান্তরিত হয়েছে। ছোটো থেকেই প্রকৃতি-পাহাড়-সবুজের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। উৎসুক মন নিয়ে অজানা প্রকৃতিকে জানার, অদেখাকে দেখার তাগিদে সে বেড়িয়ে পড়ত। একাই একের পর এক পাহাড়ি ঢাল বেয়ে সুদীপ পৌঁছে যেত চেমটাবুড়ু, গজাবুরু, মাঠাবুরু সহ অযোধ্যা সার্কিটের নানা ছোটো বড়ো পাহাড়ের শীর্ষে। বিস্তারিত জানতে নীচে পড়ুন…
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার পাহাড়ে ওঠার শুরু। তারপর পাহাড়ের খাঁজে-বাঁকে থাকা নানা ঝর্ণা, ভিউ পয়েন্টকে খুঁজে বের করা। কখনো একাই আবার কখনো গ্রামের বন্ধুদের নিয়ে পাহাড়ে চড়া। আর এভাবেই প্রকৃতির সাথে, পাহাড়ের সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছে সুদীপ। সুদীপ বর্তমানে ঝালদার বেগুনকোদড় হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। হোস্টেলে পড়াশোনা করে। পড়াশোনার পাশাপাশি একটু ফাঁক মিললেই সে বেরিয়ে পড়ে প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতির অপার রূপকে খুঁজে পেতে। শুধু নিজে দেখাই নয়, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার অপরূপ সৌন্দর্যকে পাহাড়প্রিয় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে সুদীপ।
ভ্রমণ পিপাসু পাহাড়প্রেমীদের কাছে পুরুলিয়ার অনন্য রূপকে তুলে ধরতে গাইড হিসাবে নিজেকে তুলে ধরেছে বছর আঠারোর এই পাহাড়প্রেমী। হাতে দু-তিনদিনের ছুটি মিললেই সুদীপ ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে পৌঁছে যায় চেমটাবুড়ু, গজাবুরু, বুলুমবুরু, কীর্তনীয়া সহ নানা পাহাড়ের শীর্ষে। পাশাপাশি, তার সাথে পৌঁছে যাওয়া যায় মুড়ুভাসা জলাধার, মাছকান্দা ঝর্ণা, পিটিধিরী ঝর্ণা, ঘাঘেশ্বরী ঝর্ণা। ঘন্টাদেড়েকের ছোট্ট ট্রেক করে চেমটাবুড়ুর শীর্ষে পৌঁছে গেলেই একঝলকে পুরো অযোধ্যা রেঞ্জের অপার সৌন্দর্যকে চাক্ষুষ করার সুবর্ণ সুযোগ মিলবে।
মাত্র আঠারো বছর বয়সেই পাহাড়ের কোলে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে সে এমন কিছু জায়গা খুঁজে বের করেছে যেখানে পর্যটকরা আগে সেভাবে যেতই না। আজ সুদীপের হাত ধরে ধাদকিকোচা ঝর্ণা সহ একাধিক অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পৌঁছে যাবার সুযোগ পাচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসু মানুষজন। ছাতাটাঁড় পাঁড়রী গ্রামেই সুদীপের বাস। বাড়িতে অভাব নিত্যসঙ্গী। কোনো রকমে চাষবাসের কাজ করে দিন চলে। তার মাঝেই গাইডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারেরও বেশ কিছুটা দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমী এই যুবক। বেশ কয়েক বছর ধরে গাইডের কাজ করে সে নিজেই একাধিক টেন্ট সহ নানা সামগ্রী কিনেছে।
যার মাধ্যমে পাহাড়প্রেমীদের প্রকৃতির কোলে, পাহাড়ের বুকে রাত্রি যাপনেরও ব্যবস্থা করে সুদীপ। এসবের পাশাপাশি নিজের মুঠোফোনে প্রকৃতির ছবি তুলতেও সে ভীষণ ভালোবাসে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই অন্যান্য পর্যটকদের মতো আমিও তার খোঁজ পাই। সুদীপ অযোধ্য রেঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ঘুরে দেখায়। তার অতন্ত্য সরল ব্যবহার আর মিষ্টি হাসিটা ভীষণ সুন্দর। মাত্র কয়েক ঘন্টার আলাপচারিতাতেই মন কেড়েছে পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এই সদ্য যুবক। সময়াভাবে আমাদের এবার পাহাড়ে ট্রেক করা না হলেও তবে তার হাত ধরে হয়ত কোনো একদিন পৌঁছে যাব চেমটাবুরুর শীর্ষে বা মাছকান্দার ঝর্ণার সৌন্দর্যকে চাক্ষুষ করতে। স্বভাবে লাজুক হলেও তার কথার মধ্যে রয়েছে যুক্তি।
শুধু পাহাড় ঘোরা, কিংবা ঘুরে দেখানোই নয়, তার ঝুলিতে রয়েছে পাহাড়ি গ্রাম ও এলাকা সম্পর্কিত নানা তথ্য যা ভ্রমণপ্রিয় জিজ্ঞাসু মানুষকে ভীষণভাবে সমৃদ্ধ করবে। পুরুলিয়া মানেই প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের আধার। পুরুলিয়ার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অযোধ্যা রেঞ্জের কোণায় কোণায় থাকা এই সমস্ত নিখাদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চাইলে আপনারা সুদীপকে সঙ্গী হিসাবে সাথে নিতে পারেন। তাঁর অমায়িক ব্যবহার, তাঁর দেওয়া নির্ভুল তথ্য ও সর্বোপরি তাঁর দেখানো প্রাকৃতিক নানা সৌন্দর্য আপনার মন কাড়বেই।
সুদীপ সিং মুড়ার যোগাযোগ নাম্বার: 8250197371