নিজস্ব সংবাদদাতা : সোনাগাছি থেকে সুন্দরবন কিমবা কুমুরটুলি থেকে কদমতলা – লকডাউনের মাঝেও ছুটছে বাহন মেঘদূত। লক্ষ্য একটাই শিল্পের মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে বাঙালির লড়াইকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। আর সেই লক্ষ্যেই তিলোত্তমার রাজপথ থেকে সোনাগাছির অলিগলিতে পৌঁছে যাচ্ছেন মুখার্জী দম্পতি। করোনার করাল গ্রাসে বাঙালির হৃদস্পন্দন দুর্গাপুজো আজ সঙ্কটের সম্মুখীন। করোনার হানা থেকে দেশ কবে মুক্তি পাবে তা কেউই জানেন না। কিন্তু, তা বলে এখনই হাল ছাড়তে রাজি নন পুজোপ্রেমী অনেক বাঙালিই। যেমন জয়দীপ ও সগুনা মুখার্জী। বাঙালির প্রাণের দুর্গাপুজো ভারতের গন্ডি অতিক্রম করে বিশ্বের দরবারে অন্যতম সেরা ও জনপ্রিয় উৎসব হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। সেই পুজোকে সহজে দমিয়ে দিতে নারাজ এই দম্পতি। সারা বিশ্ব করোনা আতঙ্কে জেরবার। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দুর্গোৎসবকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান তাঁরা। শিল্প যে বাঙালির বেঁচে থাকা ও লড়াইয়ের অন্যতম রসদ সেই বার্তাই দিতে রাতদিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, লকডাউনের মাঝেও কুমোরটুলির শিল্পী থেকে শুরু সোনাগাছির গলিতে ঘুরে মুখার্জী দম্পতি আয়োজন করেছেন এক অভিনব অঙ্কন প্রতিযোগিতার। যে প্রতিযোগিতায় সবাই সেরা। বিষয় একটাই – করোনাসুর বধ। নিজেদের ঘরে বসেই শিশুরা এঁকে ফেলেছেন করোনাসুর বধের বিভিন্ন ছবি। আর সেটা নিয়েই এই দম্পতি পৌঁছে যাবেন বিশ্বের দরবারে।
সৃষ্টির মাধ্যমে করোনা বধে সামিল বাঙালি – এই বার্তাই পৌঁছে দেবেন বিশ্বের দরবারে। এতেই অবশ্য থেমে থাকেননি তাঁরা। এই দুঃসময়ে বহু অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তুলে দিয়েছেন ত্রাণসামগ্রী। জয়দীপ মুখার্জীর কথায়, “আমি পেশায় পর্যটন ব্যবসায়ী। করোনার প্রভাবে পর্যটন ব্যবসা আবার কবে স্বাভাবিক হবে তা জানা নেই। আমেরিকা, ইতালি, ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্স সহ বিভিন্ন দেশের পর্যটককে মহানগরীর বুকে পুজো দেখায় আমার সংস্থা তাঁদের মাধ্যমেই বাংলার পুজোর বার্তা পৌঁছে যায় বিদেশে। এবার করোনার জেরে তাঁরা হয়ত কোলকাতায় আসতে পারবেন না, ধাক্কা খাবে বাঙালির স্বনামধন্য পুজোবার্তা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যাওয়া এই প্রয়াস। সে-ই জন্যই অন্য ভাবনার মধ্য দিয়ে বাঙালির পুজো ও অদম্য লড়াকু মানসিকতাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। সেই ভাবনা থেকেই এই করোনাসুর থিমে আঁকার ভাবনা। এতে যেমন দুর্গা পুজোর আগাম বার্তা পৌঁছাবে বিশ্বের কাছে, তেমনই শিশুদের এই লকডাউনের একঘেঁয়েমি অনেকটাই দূর হবে।” জানা গেছে, ওই দম্পতির হাত ধরেই শিশুশিল্পীদের সব আঁকা পৌঁছে যাবে ফ্রান্স, ইতালি, আমেরিকা, চিন, লন্ডন, স্পেন, জার্মানিতে কন্স্যুলের কাছে। করোনার করাল গ্রাসে সারা বিশ্ব ঘায়েল হলেও বাঙালির সৃষ্টিশীল ভাবনা,কর্ম ও শিল্প থেমে থাকে না – সেই লড়াইয়েই সামিল হয়েছেন জয়দেব ও সগুনা।